‘জেনারেশন নকিং দ্যা ডোর!’
১ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৪৫
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : ‘রাজউকের সামনে ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় নেমেছে শতশত স্কুল কলেজের ছেলেমেয়ে। এক মা তার এইট নাইন পড়ুয়া ছেলেকে টিউশন করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাঁধে ব্যাগ ভর্তি বই। নাম সাজ্জাদ।
মা বলছেন, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো, চল।
সে বলল, রোজই তো প্রাইভেট পড়ি মা। আজ না গেলে হয় না? সে তাকিয়ে আছে রাস্তায় নামা মিছিলের দিকে।
তার মা জিজ্ঞেস করলেন, না গিয়ে কী করবি?
-আমি ওদের সাথে যাব। মিছিলে।
মা কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। টিউশন স্যারকে ফোন দিলেন। তারপর ছেলের হাত ধরে ফুট ওভারব্রিজ থেকে নেমে মিশে গেলেন মিছিলে!
Generation knocking the Door!!!’
ফেসবুকে লিখেছেন রবিউল করিম মৃদুল।
গত ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টেনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মিম জাবালে নূর বাসের ধাক্কায় নিহত হয়। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় আরো কয়েকজন।
দুই সহপাঠী হত্যার বিচার দাবিতে দুর্ঘটনার পর থেকেই কলেজের সামনের সড়কে নেমে আসে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়ক দূর্ঘটনার নামে ‘মানুষ হত্যা’ বন্ধে তারপর দিন থেকেই রাজপথে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে দিন যতই যাচ্ছে এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে ঢাকার প্রায় সবকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
‘সার্থক জনম মাগো, জন্মেছি এই দেশে, গাড়ি চাপায় মানুষ মরে-মন্ত্রী সাহেব হাসে’, ‘টনক কবে নড়বে তুমি’, ‘আমরা ৯ টাকায় এক জিবি চাই না, নিরাপদ সড়ক চাই’, এসব স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে পূর্ণ সমর্থণ জানিয়েছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ।
আন্দোলনের চতুর্থ দিনে আজ ১ আগস্ট ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় দেখা যায়নি কোনও গণপরিবহন। অফিসগামী মানুষরা পায়ে হেঁটে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হলেও তারা বলছেন-আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা একাত্মতা ঘোষণা করছেন। সড়ক দূর্ঘটনার নামে সড়ক হত্যার এই প্রতিবাদে তারা শামিল হয়েছেন।
রামপুরা থেকে পায়ে হেঁটে, রিকশায় চেপে, বাসে ভেঙে ভেঙে বিমানবন্দর পর্যন্ত এসেছেন শফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী। তার গন্তব্য গাজীপুর। কিন্তু কোন গণপরিবহণ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি হেঁটেই রওয়ানা হন। তিনি বলেন, কষ্ট হোক তারপরও শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হোক, হত্যাকারীদের বিচার হোক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রায় সবাই এই আন্দোলনের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন বলে জানাচ্ছেন।
জানিসুর রহমান পাপ্পু নামের একজন লিখেছেন, ‘বাচ্চারা শুধু নিজের জন্য নামেনি। পুরো দেশের মানুষের জন্য নেমেছে। নিরাপদ সড়ক চাই।’
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সৌরভ আল জাহিদ লিখেছেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছোটভাইদের সাথে নামলাম রাস্তায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো যৌক্তিক দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে পুলিশের মাইর খেয়ে রক্তাক্ত হতে পারলে আমি পারবো না কেন? এভাবে বাসে চাপা পড়ে নিহত হওয়ার চেয়ে পুলিশের মাইর খাওয়া অনেক ভালো!-দোয়া করবেন।’
সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন লিখেছেন- ‘লাইসেন্স আছে?’ প্রশ্নটি যাদের করার কথা ছিলো এই দেশের রাস্তায় তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা দেখলাম সেই প্রশ্ন করছে রাস্তায় যাত্রীবাহী যান থামিয়ে। না থাকলেই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে।
সাবাস ছোটদের দল, এইতো চাই। বিপ্লবের বোমা ফাটিয়ে দিয়েছো তোমরা। এবার বড়রা তোমাদের কাছ থেকে শিখুক আপোষহীনতা, এই দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে থাকা অযোগ্য দুর্নীতিবাজদের নাকচ করতে শিখুক, আইনের শাসন কায়েম করতে শিখুক। যোগ্য লোকটিকে ঠিক জায়গায় বসাতে শিখুক।-আর না শিখলে, তোমরা তো আছোই।
সাংবাদিক লাবণ্য লিপির বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব আধা ঘণ্টার। কিন্তু আজ তিনি আধা ঘণ্টার রাস্তা এসেছেন দুই ঘন্টায়। তবুও লাবণ্য লিপি এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম রয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আধা ঘন্টার রাস্তা দুই ঘন্টায় অফিসে এলাম। তবু বলছি, হোক প্রতিবাদ! জীবনের নিরাপত্তা চাই!!’
‘জনপ্রতিনিধিদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হবে’, এমন একটি পোস্টার বুকে সেঁটে মিরপুর১৩ নম্বরে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এক শিক্ষার্থী। তার ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে সাংবাদিক রাজীব হাসান লিখেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস আছে হে মাননীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ? আপনাদের একজনের বরাদ্দ পাজেরো যে ৮ ফুট বাই ৭ ফুট রাস্তা দখল করে রাখে, তার চেয়ে ঢের ছোট লেগুনায় আমরা ১৬ জনও কিন্তু যাই। পারবেন তো?’
আরো পড়ুন : শাহবাগে ক্ষুদেদের পাশে বড়রা
আজও রাজপথে শিক্ষার্থীরা, গণপরিবহন সংকট
উত্তাল উত্তরা, শিক্ষার্থীদের দখলে সড়ক
‘শিগগিরই আইন, তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও’
ভেটিং শেষে নথি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে
সারাবাংলা/জেএ/এসএমএন