পথে বাস নেই, বিপাকে মানুষ
২ আগস্ট ২০১৮ ১০:০০
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে রাজপথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জের ধরে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীতে দেখা গেছে গণপরিবহনের তীব্র সংকট।
আন্দোলন শুরুর পর থেকে গত চারদিনে বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বেশিরভাগ গণপরিবহন যেহেতু ব্যক্তি মালিকানাধীন, তাই মালিকরা লোকসানের আশঙ্কায় এসব পরিবহন বের করেননি পথে।
কেরানীগঞ্জ থেকে সদরঘাট পথের খবর জানালেন আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট, তাতীবাজার, রায়সাহেব বাজার মোড় এসব এলাকায় যাবাহন নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কিছু বাস দেখা গেছে। সেগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেশিরভাগ মানুষ হেঁটেই কর্মস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন। পথের অবস্থাও থমথমে মনে হয়েছে তার কাছে।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া আজ বাড়ি থেকে বের হবেন না তারা।
অ্যাডভোকেট সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি সারাবাংলাকে বলেন, যানবাহন না পেয়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মোটরবাইক ব্যবহার করে আদালতে এসেছেন তিনি।
সদর ঘাট থেকে মিরপুরের যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন শামীম। বাস পাননি। রিকশা নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাড়া হাঁকা হচ্ছে দুই থেকে দিনগুণ। সিএনজিচালিত অটোরিকশাও হাঁকছে দ্বিগুণ ভাড়া। ফলে পায়ে হাঁটা ছাড়া গতি নেই তার।
রাজধানীর কল্যানপুর থেকে পুরানা পল্টন অফিসে এসেছেন প্রতীক। জানালেন, সড়কে গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। নেই বললেই চলে। অল্প কিছু লোকাল বাস চলাচল করছে। আর সেগুলোতেও রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। ভীড়ের কারণে এসব বাস নারী যাত্রীদের তুলছে না। ফলে নারী যাত্রীরা পড়ছেন সবচেয়ে বিপাকে।
কুর্মিটোলায় আছেন আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট উজ্জল জিসান। তিনি জানান, ওই্ পথে গণপরিবহন নেই। শুধু ব্যক্তিগত বাহনগুলো চলছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
কুর্মিটোলা থেকে উত্তরায় যেতে পথের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আল আমীন। বেসরকারি উত্তরা ব্যাংকে কর্মরত আল আমীন বলেন, সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। আন্দোলনকারীরাও কোনো সমাধানে আসছে না। ফলে এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মিরপুর থেকে প্রতিদিন যে বাসগুলো মতিঝিল, গুলশান রুটে যাওয়া আসা করে সেগুলোরও আজ দেখা পাওয়া যায়নি বললেই চলে। মিরপুর, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, তালতলায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত অফিসগামী মানুষকে। দূর থেকে কোনো বাস আসতে দেখলেই তারা অপেক্ষা করেছেন। কাছে আসতেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেগুলো বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের স্টাফ বাস। ফলে বারবার আশাহত হয়েছেন এসব এলাকার অপেক্ষমান যাত্রীরা। পরে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশায় কর্মস্থলে পৌঁছতে চেষ্টা করেছেন তারা।
আগারগাঁও, বিজয়সরণী, ফার্মগেট, র্যাংগস ভবন, কাকরাইল, শাহবাগ, সাতরাস্তার মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোও ছিল তুলনামূলক ফাঁকা।
ফুটপাথে ছিল হেঁটে রওনা হওয়া মানুষের ভীড়। তবে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই দেখা যায়নি তেমন বিরক্তি। অবশ্য অনেকে এসব বিষয়ে কথাই বরতে চাননি।
শ্যাওড়াপাড়ায় সারাবাংলার কথা হয় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত চার দিন ধরেই কষ্ট হচ্ছে। তবু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কোনো বিরুপ মনোভাব নেই তার। বললেন, অফিস করতে না হলে তিনিও পথে নামতেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
যে কোনো ধরনের কষ্টের বিনিময়ে নিরাপদ সড়ক চান, নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা চান বলে জানান আরেক অফিসগামী নিগার পারভীন। শিক্ষার্থীদের কষ্টের আন্দোলন যেন সফল হয় সেই প্রার্থনা করছেন বলেও জানালেন এই নারী।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পথে গণপরিবহন নামাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেশিরভাগ গণপরিবহনের মালিক।
আকিক পরিবহনের পরিচালক এ এইচ মহসীন হাওলাদার সারাবাংলাকে জানান, ভাঙচুরের আশংকায় পথে গাড়ি না নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। গতকালও ভাঙচুর হয়েছে। এ কারণে লোকসান যেন গুনতে না হয় সেজন্য আজ একেবারেই গাড়ি বের না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এদিকে আজ দুপরের মধ্যে ৯ দফা বাস্তবায়ন এবং নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ক্ষমা না চাইলে রাজধানী ঢাকা অচলের হুমকি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১ আগস্ট) শাহবাগে অবরোধ ও বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
আরো পড়ুন : কাল দুপুরের মধ্যে দাবি না মানলে ঢাকা অচলের ঘোষণা
সারাবাংলা/এসএমএন