Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ জাতের নতুন ধান, মাঠে মাঠে ফুটবে কৃষকের হাসি


২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৫:২৩

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বছর শেষভাগে ধান নিয়ে সুখবর দিচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা পাঁচটি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন।

ব্রি ৮২, ব্রি ৮৩, ব্রি ৮৪, ব্রি ৮৫ ও ব্রি ৮৬ নামের জাতগুলো জাতীয় কারিগরি কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে আজ।

উদ্ভাবিত জাতগুলো অল্প দিনে উচ্চফলনশীল হওয়ায় ধানের মোট উৎপাদনে তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করছেন ব্রি’র বিজ্ঞানীরা।

এর মধ্যে ব্রি ৮৬ জাতটিতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বোরো মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত ব্রি ২৮ এর মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই উচ্চফলনশীল ব্রি ৮৬।  আর ব্রি-৮২ তো কৃষক পাবে সবচেয়ে উচ্চফলন। যা উৎপাদিতও হবে সবচেয়ে কম সময়ে।

এর মধ্য দিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ব্রি’র বিজ্ঞানীরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘উদ্ভাবিত নতুন পাঁচটি জাতের মধ্যে ৩ টি আউশ মৌসুমের ও ২টি বোরো মৌসুমের। আউশকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সে জন্যই আমরা এবার আউশের ওপর জোর দিয়েছি।‘

তিনি বলেন, ‘বোরোতে এখন পর্যন্ত যত জাত আছে সদ্য উদ্ভাবিত ব্রি-৮৪ তে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে জিংক রয়েছে। ব্রি-৭৪ জাতের ধানে ২৪ শতাংশ জিংক থাকলেও নতুন জাতে এর পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬।‘

মো. শাহজাহান কবীর আরও বলেন, ‘জাতগুলো আজ কারিগরি কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। ’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তমাল লতা আদিত্য এ বিষয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে ব্রির বিজ্ঞানীরা নতুন ৫ জাতের ধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমবারের মতো একটি জাতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন বিজ্ঞানী অবশ্য ব্রি-৮২ জাতটির বেশি প্রশংসা করলেন। তিনি বলেন,  ‘ব্রি-৮২ দেশের মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে।’

সদ্য উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮২ রোপা আউশ মৌসুমের স্বল্পকালীন একটি জাত। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। জাতীয় কারিগরি কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া এ জাতটির গড় ফলন হেক্টরে সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত।

ব্রি’র বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, উদ্ভাবিত নতুন জাতটির চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ। এর আকৃতি মাঝারি মোটা এবং এর রং সাদা। এর চাল থেকে ভাত হবে ঝরঝরে। প্রতিটি দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এর ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৮৪ গ্রাম।

বিজ্ঞানীরা জানান, ব্রি ধান ৮২ এর জীবনকাল হবে রোপা আউশ মৌসুমের প্রচলিত জাত ব্রি ধান ৪৮ এর চেয়েও ৪ থেকে ৫ দিন কম। উদ্ভাবিত জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় রোপা আউশ মৌসুমে ধান আবাদের পর আমন আবাদেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে বাড়বে ধানের মোট উৎপাদনও।

ব্রি ধান ৮৩ বোনা আউশ মৌসুমের একটি জাত। এর গড় ফলন হেক্টরে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত, যা প্রচলিত ব্রি ধান ৪৩ এর চেয়েও ১ টন বেশি। এ জাতীয় ধানের গাছের উচ্চতা ১০৫ সে. মি.।

ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানান, উদ্ভাবিত নতুন এই জাতটির জীবন কাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। এর চাল মাঝারি মোটা ও সাদা এবং এ ধরনের চাল থেকে হওয়া ভাত হবে ঝরঝরে। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ শতাংশ এবং দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ শতাংশ।

ব্রি ধান ৮৪ বোরো মৌসুমের একটি স্বল্পকালীন জাত। একই সঙ্গে এটি উচ্চফলনশীল জিংক সমৃদ্ধও। এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন  এবং হেক্টরে গড় ফলন ৬ থেকে সাড়ে ৬ টন। গাছের উচ্চতা ৯৬ সে. মি.। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

ব্রি সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই জাতের ধান থেকে হওয়া চালের আকার আকৃতি লম্বা চিকন এবং চালের রং লালচে বাদামি। ভাত ঝরঝরে। দানায় জিংকের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিজ্ঞানীদের মতে, ব্রি ধান৮৪ এর জীবনকাল বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৮ এর মতোই। এর জীবনকাল স্বল্প হওয়ায় বোরো মৌসুমের এ ধান আবাদের পর পাট চাষেরও সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান ৮৫ রোপা আউশ মৌসুমের নতুন একটি জাত। এ জাতটির গড় ফলন সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত। গাছের উচ্চতা ১১০ সে. মি.।

ব্রি সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই জাতের জীবন কাল বন্যামুক্ত পরিবেশে ১০৬ থেকে ১১০ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। চালের আকার আকৃতি লম্বা ও মাঝারি চিকন এবং রং সাদা। ভাত ঝরঝরে। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ১ শতাংশ। আর ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২ দশমিক ৩ গ্রাম।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে জৈব প্রযুক্তি (এন্থার কালচার) ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রথম জাত ‘ব্রি ধান ৮৬’। সদ্য উদ্ভাবিত এ জাতটির গড় ফলন ৬ টন থেকে সাড়ে ৬ টন পর্যন্ত। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এর ফলন ৮ টনকেও স্পর্শ করতে পারে।

ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানান, উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৮৬   এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪২ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ শতাংশ। চালের আকার আকৃতি লম্বা ও চিকন এবং রং সাদা। ভাত হবে ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। স্বাভাবিক অবস্থায় গাছ প্রতি গুছির সংখ্যা ৯ থেকে ১০ টি। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.২৩ গ্রাম। জাতটির ফলন ও জীবনকাল ব্রি ধান২৮ এর মতো এবং ব্রি ধান২৮ চাষযোগ্য জমিতে চাষাবাদের উপযোগী হওয়ায় ব্রি ধান২৮ এর পরিপূরক জাত হবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর