কৈশোরের দুঃসাহসিকতা, রাজপথে শৃঙ্খলা
২ আগস্ট ২০১৮ ১৫:০৮
।। সারাবাংলা ডেস্ক।।
ঢাকা: বন্ধ স্কুল, বন্ধ কলেজ। সারা শহরে চলছে অঘোষিত অবরোধ। পথে নেমে গেছে কিশোর বয়সীরা। হালকা পাতলা গড়ন, যেন বাতাসে হেলে যায় কিন্তু কী দৃঢ় তাদের চলাফেরা! দারুণ প্রত্যয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
এ এক অন্য আন্দোলন, অন্য তাদের ভাষা, অন্য তাদের প্রত্যয়। কেউ বলে না, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, কেউ বলে না, কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও। ওদের ভাষা খুব সরল, সহজ, We Want Justice (আমরা ন্যায় বিচার চাই)।
এ শহর হাজারও আন্দোলনের সাক্ষী। আন্দোলন হলে গাড়ি ভাঙ্গা হয়, মানুষ মরে, মানুষ পোড়ে। এ যেন কেমন আন্দোলন, কেউ দেখেনি এমন আন্দোলন, যেখানে শুধু ন্যায় মানে ন্যায়, অন্যায় মানে অন্যায়। আন্দোলন চলছে কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স, রোগী, শিশু বৃদ্ধকে কেউ বাধছে না। উল্টো এগিয়ে দিচ্ছে কয়েক পথ।
দারুণ শক্তিশালী তাদের ভাষা, “৪৭ বছরের পুরানো রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।”
ভয় পাওয়া কাকে বলে -এটা এখনো জানে না এই কিশোররা। প্রধানমন্ত্রীকে বলছে, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ছাত্রদের আপাতত রাস্তা সামলাতে দিন, মন্ত্রী পুলিশদের স্কুলে পাঠান শিক্ষিত করতে।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই গাড়ির চালক কোনোদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি লাইসেন্সের জন্য কারো কাছে তাকে কোনোদিন জবাবদিহি করতে হবে! কিন্তু এই দেশ এই সব কিশোরদের, তারা আজ প্রশ্ন তুলেছে। গাড়ির লাইসেন্স কই?
বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা।
যার কাছে লাইসেন্স নেই তার কপালেই লিখে দাও, সবাইকে জানিয়ে দাও -এ অন্যায়, এ গাড়ির মালিক অপরাধী।
ওরা পথে নেমে এসেছে “১৯৫২তে ভাষার জন্য, ২০১৮তে নিরাপদে বাঁচার জন্য।” বাঁচার অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না ওরা।
শুধু যে কিশোররা মাঠে নেমেছে তা নয়, মাঠে নেমেছে তাদের মায়েরাও। তারাও এই যুদ্ধে যোগান দিচ্ছেন শক্তি, খাবার।
এই পঁচে যাওয়া শহরের সমস্যায় টিকে থাকার সমাধান বের হতে পারে শুধু নতুনদের মাথা থেকে, এই যে একটা ইমার্জেন্সি লেন, যেটা সব সময় খালি থাকার কথা। জ্যামের শহরের জ্যামে আটকে মরতে পারে না একটা প্রাণ। এই সমাধান বের করতেও পথে নামতে হলো কিশোরদের।
আন্দোলন চলছে। রোদে, বৃষ্টিতে। তারা পথে দাঁড়িয়ে আছে, একে অপরকে সাহস দিচ্ছে, তুমি যদি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ।
সারাবাংলা/এমএ/এটি