খালেদা জিয়ার খালাস দাবি
২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৫৫
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে খালেদা জিয়ার খালাস চান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান।
বুধবার মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান এ দাবি করেন। গত চারদিন ধরে তিনি খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন।
রেজ্জাক খান বলেন, বিদেশ থেকে কে টাকা পাঠিয়েছে দুদক আদালতে তা উত্থাপন করতে পারেনি। এছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার অভিযোগ সম্বন্ধে কোনো সাক্ষী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে কিছুই বলেননি। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এ মামলার বিষয়বস্তুর সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। মামলার বাদী ছাড়া আর কোনো সাক্ষী বলেননি যে খালেদা জিয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অনুমোদনের কথা বলা হলেও অনুমোদনের নথি কেউ দেখেন নাই। তার বিরুদ্ধে আনীত অনুমোদনের অভিযোগ সত্য নয়।
এছাড়া দেশে এত মামলা থাকতে খালেদা জিয়ার এ মামলায় দুদকের এত আগ্রহ কেন প্রশ্ন তুলেন তিনি।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ খালেদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়ার খালাস দাবি করেন তিনি।
এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিকভাবে দায়ের করা মামলা। এ মামলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে কোনোভাবেই বলতে হবে ‘কেষ্ট বেটাই চোর’।
ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার চলছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট মীর আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন মানিক প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সেক্রেটারি মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দু’টি মামলারই প্রধান আসামি খালেদা জিয়া।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
এআই/একে/জেডএফ