স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের স্বীকৃতি দিলো আইসিডিডিআর,বি
৩ আগস্ট ২০১৮ ০০:২৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বীকৃতি দিলো ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা এবং ঢাকার ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার মানবিক কাজে নিবেদিত কর্মীদের এমন স্বীকৃতি দিতে পেরে গর্বিত বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি’তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজস্ব কর্মীদের এই স্বীকৃতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরূপণ কর হয়। এতে দেখা যায়, কলেরার মহামারি থেকে রক্ষা পেতে আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রায় ১০ লাখ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়ে, নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য সংকটে বসবাস করছে, যা কলেরার মতো সংক্রামক রোগ বিস্তারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসায় এবং টিকাদানের মাধ্যমে কলেরা প্রতিরোধে আইসিডিডিআর,বি নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে।
আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী কলেরা মহামারী মোকাবিলা করে আসছে। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মানবিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ যেমন- সুদান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের কলেরা মহামারি প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২৯ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয় এবং ৯৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এ রোগটি প্রায়ই সংঘাতের মধ্যে পড়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবস্থা সংকটপূর্ণ এবং যেখানে অপুষ্টির ভয়াবহ সমস্যা থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যে কলেরা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এসব কারণে আইসিডিডিআর,বি সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটিং গ্রুপের কাছে কলেরার মুখে খাওয়ার টিকার জন্য আবেদন করতে সহায়তা করে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিসরের কলেরার টিকাদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়।
এমন টিকাদান কার্যক্রমের জন্য ১৫০ জনের একটি দলকে নিয়োজিত করে আইসিডিডিআর,বি। টিকাদান পরবর্তী জরিপে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিকাদান করা গেছে, যা এক বিশাল সাফল্য। আর এটি সম্ভব হয়েছে চরম প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া কর্মী বাহিনীর কারণে। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের নিয়ে কলেরার টিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপ এখন চলছে।
এদিকে, ঢাকায় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে এ বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি-তে ৫৫ হাজার ২২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়, যা ২০০৭ সালের পর গড়ে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী এবং সাধারণ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় এবং ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কর্মপালনে আত্মবিশ্বাসী, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও কার্যকরী অবদানের জন্য আমাদের ২০ জন কর্মীকে স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং সব স্তরের কর্মীসহ পুরস্কারপ্রাপ্তরা এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর