জিম্বাবুয়ে নির্বাচন: বিরোধীদের ফল প্রত্যাখ্যান
৩ আগস্ট ২০১৮ ১৯:৫২
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগোয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করে জিম্বাবুয়ের নির্বাচন কমিশনের (জেডইসি) ঘোষিত ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলো। তারা জেডইসি’র ঘোষিত ফলকে ‘যাচাই-বাছাইহীন ভুয়া ফল’ বলে অভিহিত করেছে। শুধু তাই নয়, ভোটে কারচুপি হয়েছে জানিয়ে ঘোষিত ফলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়েরও ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলী নেতা নেলসন চামিসা’র এমডিসি অ্যালায়েন্স। যদিও ভোটগণনায় কোনো ধরনের কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন।
গত বছরের নভেম্বরে দীর্ঘদিন ধরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা রবার্ট মুগাবের উৎখাতের পর এই প্রথম নির্বাচ অনুষ্ঠিত হলো দেশটিতে। শুক্রবার (৩ আগস্ট) জেডইসি ঘোষিত ফলে বলা হয়, ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জানু-পিএফ পার্টির নানগাগোয়া জয়ী হয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা নেলসন চামিসা পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
ফল ঘোষণার পর এক টুইটে নানগাগোয়া ‘নতুন শুরু’র জন্য সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। যদিও বিরোধীরা ফল গণনায় ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ সামনে এনেছেন।
ফল ঘোষণার পর এক টুইটে চামিসা বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ভুয়া ফল ঘোষণা করেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেয়, এমন উপযুক্ত ও যাচাইকৃত ফলই কমিশনের ঘোষণা করা উচিত। স্বচ্ছতার ঘাটতি, সততার অভাব, নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অভাব এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
দেশটির প্রদেশের বেশিরভাগেই ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন যে ঘোষণা দিয়েছে, সেই হিসাব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
জেডইসি ঘোষিত ফলে দেখা যায়, ৪৮ লাখেরও বেশি ভোটের মধ্যে ৩৬ হাজার ৪৬৪ ভোটের ব্যবধানে রান-অফ নির্বাচন এড়াতে সক্ষম হয়েছেন নানগাগোয়া। নির্বাচনে তিনি পেয়েছে ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে চামিসা পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোট। এর আগের শেষ নির্বাচনে রবার্ট মুগাবে পেয়েছিলেন ৬১ শতাংশ ভোট, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মরগাসন সাংগিরাই পেয়েছিলেন ৩৪ শতাংশ ভোট। সে তুলনায় নানগাগোয়ার সঙ্গে চামিসার ব্যবধান বেশ কম।
ভোটের ফল ঘোষণায় জেডইসি অনেক বেশি সময় নেওয়ায় ফল গণনায় কারচুপির শঙ্কা আরও বেড়েছে বিরোধী দলের মধ্যে। এর আগে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও জেডিইসিতে দ্রুত নির্বাচনী ফল ঘোষণার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।
হারারে থেকে বিবিসির পুমজা ফিহলানি বলছেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান সামান্য। এই ফল নিয়ে নেলসন চামিসা যে অভিযোগ তুলেছেন, এখন তার কাঁধে দায়িত্ব তা প্রমাণ করার। ফলকে চ্যালেঞ্জ করার পর তার নিষ্পত্তি হওয়ার আইনি ধাপ অতিক্রমের জন্যই এখন জানু-পিএফ পার্টি কোনো উৎসবও করেনি। তবে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ফল যাই আসুক না কেন, নানগাগোয়া ও চামিসা— দু’জনেই তাদের দলকে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছেন, যা শেষ জিম্বাবুয়েবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
এদিকে, জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে’র রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের গাড়িগুলোতে করে মাইকিং করে বলা হয়েছে, ‘জিম্বাবুয়ে এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত। আমরা আপনাদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা নির্ভয়ে রাস্তায় আসুন, ব্যবসা করুন। সবকিছু ঠিক আছে, ভয়ের কিছু নেই।’
বিরোধী দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হারারে শহরের পরিস্থিতি ছিল খানিকটা নিরুত্তাপ, রাস্তায় মানুষও তেমন নেই। নির্বাচনের এই ফল মেনে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও হারারের এমবারে উপশহর এলাকা উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে। ওই এলাকায় জানু-এফ পার্টির সমর্থক বেশি বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/টিআর