শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান ঢাবি শিক্ষক সমিতির
৪ আগস্ট ২০১৮ ২১:৪৮
।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাবি: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঘরে ও শ্রেণি কক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শনিবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, প্রিয় শিক্ষার্থীরা, ইতোমধ্যে তোমরা বিজয়ী এবং ইতিহাসের অংশ হয়েছো। তোমাদের আন্দোলনের মুখে সরকার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধার রেখে আইন প্রণয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তোমাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তোমরা জাতিকে যে পথ দেখিয়েছো তোমাদের সে আন্দোলনের সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয়। তোমাদের এ আন্দোলনকে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো শক্তি যেন কলুষিত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তাই তোমরা ঘরে ও শ্রেণি কক্ষে ফিরে যাও।
অভিভাবক ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনাদের সন্তানকে ঘরে ও শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে বলুন। জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যত এই শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। দেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আমাদের আহ্বান, বিনা নোটিশে অলিখিত ধর্মঘটের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করবেন না; দেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাসচাপায় দুজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সড়ক ও পরিবহনখাতের নৈরাজ্য, অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতাদূর করতে রাজধানীসহ সারাদেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেও ন্যায্য দাবিগুলোর প্রতিসমর্থন জানিয়ে ২ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টসকল কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদেও ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে তা পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকার ৯ দফা দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপও ঘোষণাকরেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশবাসী আশা করেছিল, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ঘরে ও শ্রেণি কক্ষে ফিরে যাবে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, সাতদিন অতিবাহিত হলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় একদিকে শিক্ষার্থীদের রাজপথ দখলকরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে রাজধানীর অভ্যন্তরে ও রাজধানীর সাথে বাইরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
উদ্বেগ প্রকাশ করে এতে বলা হয়, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যার খবর গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রচার হয়েছে ও হচ্ছে। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাকে অচল করে দেওয়ার জন্য বিএনপি নেতা জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী টেলিফোনে নির্দেশ দিয়েছেন, যে টেলিসংলাপ ইতোমধ্যে প্রচারিত হয়েছে।
এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরের অনলাইন অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর খবর ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরেএ-ও প্রকাশিত হয়েছে, হঠাৎ করে রাজধানীতে স্কুল ড্রেস বানানোর হিড়িক পড়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের এ ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদেও ন্যায্য আন্দোলনকে নস্যাৎ করার এই ষড়যন্ত্রে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের এই আশঙ্কা অমূলক নয়।’
বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়, ‘তোমরা আমাদের সন্তানতুল্য, তোমরা পুরো দেশকে নতুন পথ দেখিয়েছো, চোখে আঙুল দিয়ে ভুল-ভ্রান্তি গুলো ধরিয়ে দিয়েছো। তোমাদের এই প্রত্যুৎপন্নমতি কার্যক্রম পুরো পরিবহন ব্যবস্থা, প্রশাসন ও সরকারের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকার তোমাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরও রাজপথে অবস্থান কুচক্রী, সুযোগসন্ধানী ও স্বার্থান্বেষী মহলকে তাদের ষড়যন্ত্রের পথ বিস্তৃত করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা তোমাদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত। এই অবস্থায় সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঘোষিত রোডম্যাপ দ্রুত বাস্তবায়ন করে সড়ক ও পরিবহন খাতের অরাজকতা দূর করুন।’
সারাবাংলা/কেকে/এমআই