Saturday 19 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্ষণ-হত্যা-চোখ তুলে ফেলা: গুজবের নগরী ঢাকা

সন্দীপন বসু
৪ আগস্ট ২০১৮ ২২:৩১ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ ১৭:২৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। সন্দীপন বসু ।।

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আজ সয়লাব বেশ কিছু ভিডিও ও ছবিতে। যে ছবি ও ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, ধানমন্ডি ও জিগাতলা এলাকায় চার জন স্কুলছাত্রীকে ধরে ধর্ষণ আর চারজন স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। চোখে বাংলাদেশের পতাকা বাঁধা ও চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা দুই ছাত্রের ছবিতে দাবি করা হয়েছে, ওই ছাত্রদের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। এই ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল। কেবল ভার্চুয়াল জগতেই না, রাস্তা-ঘাটে, চায়ের দোকানেও ছিল এই গুজব নিয়ে আলোচনা।

‘অল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে দাবি করা হয় আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই ছাত্রীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন গ্রুপের ভিডিওতে বিভিন্নজনে নিশ্চিত করে প্রাথমিকভাবে রাস্তায় দুইজন ও পরে হাসপাতালে মারা গেছে আরো দুই শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে আজ দুপুর ও বিকেলে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল গুজবের নগরীতে। রাতেও সারাদেশে চলছিল এই গুজবের রেশ। অথচ সারাবাংলার অনুসন্ধান ও পুলিশের তথ্যসূত্রে ধর্ষণ, হত্যা, চোখ তুলে ফেলার একটি আলামতও মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ আজ শনিবার (৪ আগস্ট) বিকেলে আন্দোলন চলাকালে গুজবের এক নতুন মাত্রা যোগ করেন ঢাকা অ্যাটাক চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে কান্নামুখর হয়ে বলতে থাকেন জিগাতলায় একজনের চোখ তুলে ফেলা ও চারজনকে মেরে ফেলার ঘটনা। দেখে মনে হয় যেন নিজের বাসার নিচে এই অভিনেত্রী মাত্রই দেখে এসেছেন এই চোখ তুলে নেওয়ার ঘটনা!

এ সময় কাজী নওশাবা কান্না ভেজা কণ্ঠে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার দায়িত্ব না নিলে জনগণ দায়িত্ব নেবে, আমরা একাত্তর দেখেছি, আমরা বায়ান্ন দেখেছি, আমাদের দরকার নেই কাউকে।’

ঘটনার পরপরই তুমুল আলোচিত হয় পরিচিত এই অভিনেত্রীর ভিডিওটি। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ভিডিওটিতে সাত হাজারের বেশি লাইক ও তিন হাজার সাতশ শেয়ার ছিল। যদিও খোঁজ নিয়ে নওশাবার বর্ণিত এই ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার পর সারাবাংলা থেকে অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময় আমি ধানমন্ডি ছিলাম না, ছিলাম উত্তরায়। এক বন্ধুর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেই লাইভ দিয়েছি। পরবর্তীতে এই ভিডিও প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে পুলিশকে তিনি জানান, একটি ফোন কল পেয়ে এই লাইভ ভিডিওটি করেন তিনি।

শুধু নওশাবাই নন। স্কুল পোশাক পরা আরো তিন নারী ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। চিৎকার, কান্নাকাটি ও আহাজারির মাধ্যমে তারা ধর্ষণের বর্ণনা দিলেও ধর্ষণের স্থান ও ঘটনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি। এই ভিডিওগুলো ও এর ঘটনা প্রসঙ্গে ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. পারভেজ ইসলাম জানান, আমাদের কাছে এখনো কোনো ধর্ষণ বা নিহতের খবর আসেনি। কারো চোখ তুলে ফেলার খবরও পাইনি আমরা। এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন পুলিশ কর্মকর্তা পারভেজ। তিনি আরো জানান, ফেসবুকে প্রচার করা ভিডিওর কথা আমরাও শুনেছি। ভিডিও করা মানুষদের এবং ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া মানুষদের খুঁজছি আমার। হয়তো তারা আমাদের এই হত্যা ও ধর্ষণ রহস্যের সমাধান দিতে পারবেন।

এই তিন নারী ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে এক ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ফেসবুক লাইভে জানায়, তার সামনে পুলিশের লেগুনায় ভরে মেয়েদের তুলে নিয়ে গেছে। ছেলেদের অবিচারে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করে ছেলেটি। কিন্তু এ ঘটনার কোনো সত্যতাও মেলেনি।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি দল রাজধানীর জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের মেরে ফেলা ও চারজনকে ধর্ষণ করার বিষয়টি গুজব বলে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় সরেজমিনে ঘুরে এসে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানায়। এ সময় তারা এই ধরনের গুজবে কান না দিতে সবাইকে অনুরোধও করেন।

শিক্ষার্থীদের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ধানমন্ডি আইডিয়ালের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান তুর্য, নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রোহান ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান অপু। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী আন্দোলনরত এই তিন শিক্ষার্থীকে আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে যান।

আজ সন্ধ্যার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইং থেকে সকলের উদ্দেশে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না জেনে এবং সত্যতা নিশ্চিত না করে হিংসাত্মক ও ঘৃণা ছড়ানো ভিডিও শেয়ার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা সাত দিন ধরে রাস্তায় অবস্থানের কারণে রাজধানীর জনজীবনে কার্যত স্থবিরতা নেমে এসেছে।

সারাবাংলা/এটি

সন্দীপন বসু সন্দীপন বসু কলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর