সংস্কার হচ্ছে সরকারি শিশু পরিবার ও ছোটমনি নিবাস
৬ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৪২
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের এতিম ও গরীব শিশুদের অন্যতম আশ্রয়স্থল সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত এসব অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। ফলে, বসবাসের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার ও একটি ছোটমনি নিবাস সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস নির্মাণ/ পুনঃনির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলা’কে জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যেই প্রকল্পটি প্রকিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে সমাজ সেবা অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতর।
১৯৬১ সালে শিক্ষা দফতর থেকে স্টেট অরফানেজগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব সমাজকল্যাণ পরিদফতরের ওপর ন্যাস্ত করা হয়। এই স্টেট অরফানেজ বা সরকারি এতিমখানাগুলোকে পরবর্তী সময়ে সরকারি শিশু সদন হিসেবে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে পারিবারিক পরিবেশে এতিম শিশুদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ও সহচর্য দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিপালনের জন্য শিশু সদনগুলোকে সরকারি শিশু পরিবারের রূপান্তরিত করা হয়েছে। ১৯৪৪ সালের এতিমখানা এবং বিধবা সনদ আইন, ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের বিধান মোতাবেক পিতৃ-মাতৃহীন বা পিতৃহীন এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের পূর্ণমর্যাদা দেওয়া, তাদের অধিকার এবং স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারে এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের লালন-পালন করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদ, দেশের সংবিধান ও জাতীয় শিশু নীতিমালায় বর্ণিত বিধান এবং মানবিক ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার অন্যান্য শিশুদের মতো পরিত্যক্ত শিশুদের সুষ্ঠুভাবে লালন-পালন ও উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতিম ও পিতা-মাতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত শিশুদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অধিকার সুরক্ষায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এতিম ও পিতামাতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সময়ের দাবি অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ছোটমনি নিবাসের পরিধি বিস্তৃত করে পরিত্যক্ত শিশুদের পাশাপাশি ঠিকানাবিহীন, বিপন্ন ও দুদর্শাগ্রস্ত নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের শিশুরা হচ্ছে শিশু পাচারকারীদের কবল হতে উদ্ধার করা শিশু, অভিভাবকহীন দুদর্শাগ্রস্ত ও বিপন্ন শিশু, হারানো শিশু এবং কারাগারে অবস্থানরত সমস্যাগ্রস্ত মহিলাদের শিশু। পরিত্যক্ত শিশুর মতো এসব শিশুও ভীষণভাবে দুর্দশাগ্রস্ত ও সরকারি অভিভাবকত্বের দাবিদার। তাই সাম্প্রতিককালে এ ধরনের শিশুদেরকেও ছোটমনি নিবাসে গ্রহণ ও প্রতিপালন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ছয়টি ছোটমনি নিবাসে অভিভাবকহীন এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের লালন-পালন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার ও একটি ছোটমনি নিবাসের হোস্টেলগুলো বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। এ অবস্থায় হোস্টেলগুলো পুনঃনির্মাণ করা জরুরি। সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার ও একটি ছোটমনি নিবাসের হোস্টেল পুনঃনির্মাণের জন্য ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিস কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৮টি সরকারি শিশু পরিবার এবং একটি ছোটমনি নিবাসের হোস্টেল পুনঃনির্মাণ, নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা, শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং শিশুদের পরিচর্যা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে, যেন তারা যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর