অাবারও সরব বিদ্যালয়, নীরব বিশ্ববিদ্যালয়
৭ আগস্ট ২০১৮ ১১:২৫
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে টানা আটদিন পর ধীরে ধীরে সরব ও কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজধানীর স্কুলগুলো।
সোমবার (৬ আগস্ট) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। তবে সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের পর বন্ধ রয়েছে বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ক্যাম্পাসগুলোয় বিরাজ করছে এক ধরনের নীরবতা।
আজও গণপরিবহন সংকট, দুর্ভোগে অফিসগামী মানুষেরা
নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রথম দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলেও পরে তাতে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। এরপরই মূলত হার্ড লাইনে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিরপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলায় আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। এ সময় আক্রমণের শিকার হন পেশাগত দায়িত্ব পালনে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরাও।
সোমবার রাজধানীর উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড ও রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়। এরপরই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে যায় তারা। বেলা ১১ টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত চলা সে সংঘর্ষে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় প্রায় ৪০ শিক্ষার্থীকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব) মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) ক্লাস বর্জন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। একইসঙ্গে সোমবারের ঘটনায় বেসরকারি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ যেসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে তাদের মুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা প্রদান ও হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রশাসনকে বাদি হয়ে মামলা করার দাবি জানানো হয়।তবে এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য ওই সংগঠনটির দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সোমবার ক্লাসশুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার রাজধানীর স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেড়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জানান, গতকালের চেয়ে আজ (মঙ্গলবার) শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি। এ সপ্তাহের মধ্যেই এ উপস্থিতি শতভাগে উন্নীত হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শিক্ষার্থী বেড়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলেও। সেখানকার একজন শিক্ষক জানিয়েছেন সোমবারের চেয়ে অন্তত ত্রিশ ভাগ উপস্থিতি বেড়েছে আজ। আবহাওয়া ভাল থাকায় এবং অস্থিরতা কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন তিনি।
রামপুরা একরামুন্নেসা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম তালুকদার জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে নিয়মিত।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা একযোগে প্রতিবাদ কর্মসূচী ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় মঙ্গলবারও কুড়িল বিশ্বরোডের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। বেলা ১১ টার পরিস্থিতি আজও উত্তপ্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা। সড়কে পুলিশের সাঁজোয়া যান চলাচল করতেও দেখা গেছে।
এছাড়া পুলিশ সপ্তাহ চলায় রাজধানীতে আজও গণপরিবহনের উপস্থিতি বাড়েনি। অফিসগামী সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
সারাবাংলা/এমএস/এমআই