সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
৭ আগস্ট ২০১৮ ১৩:১২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়েছে কর্মরত সাংবাদিক সমাজ।
মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা গোল চত্ত্বরে কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দ-এর ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতীকি কর্মবিরতি পালন করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন থেকে এ সময় হামলাকারীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকদের ওপর গত কয়েকদিন একের পরএক হামলা চালানো হয়। এমনকি পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের বেছে হামলা চালায় কিছু দুর্বৃত্ত।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্রাইম চিফ পারভেজ খান বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে। হামলাকারী সবাই চিহ্নিত, এটা সবাই জানে। সরকার আন্তরিক হলে হামলাকারীরা আইনের আওতায় আসবে।
তিনি বলেন, বিগত দিনে সাংবাদিকদের আন্দোলন থেকে এবারের আন্দোলন ভিন্ন। এবার কোনো দলীয় সাংবাদিক পক্ষ আন্দোলন করছে না। এই আন্দোলনে সফলতা আসবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএইউজে) কোষাধ্যক্ষ ও নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদ বলেন, প্রশাসন উসকানিদাতার পরিচয় প্রকাশ করতে পারছে কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ফুটেজ তারা গণমাধ্যমের কাছে চাইছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের ইচ্ছে থাকলে তাদের কাছে যে ফুটেজ আছে তাই দিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পারবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আহত হলে সমাজের অন্য সবাই আহত হয়। অন্যদের সংবাদ প্রকাশ বন্ধথাকে। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বাংলা ভিশনের সাংবাদিক দীপন দেওয়ান বলেন, ‘আমরা যারা মাঠে কাজ করি, তাদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। আমরা দেখেছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুজবকারীদের কীভাবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপরে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কোনো প্রক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা সরকারকে বলতে চাই, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু না হলে, এরপর আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার দীপু সারোয়ার বলেন, চলমান আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী, আন্দোলন বিরোধী এবং পুলিশ তিন পক্ষের কাছ থেকেই হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা কারও প্রতিপক্ষ নয়, তবুও কেন তাদের ওপর এমন হামলা। অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা থেকে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন ‘আই সে নো’ শুরুর ঘোষণাও মানবন্ধন থেকে দেওয়া হয়। সকল সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নির্যাতনবিরোধীদের এ ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে ভিডিওসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘# আই সে নো’ লিখে একাত্মতা প্রকাশের আহবান জানান তারা।
সাংবাদিকরা বলেন, প্রতি মূহুর্তে হাজারো চাপ এবং বিপদ উপেক্ষা করে সত্য সংবাদ সংগ্রহ ও তা প্রকাশের চেষ্টা করছেন তারা। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলা করার মাধ্যমে সত্য নয়, গুজবের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সব ধরনের রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারীদের সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তারা। এর মাধ্যমে দেশ ও জনগনের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ ছাড়া বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই জঘন্য হামলার সমস্ত ভিডিও ফুটেজ আছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চাইলেই এসব ফুটেজ দেখে হামলাকালীদের বের করা সম্ভব। কিন্তু এখনো সরকারের এধরনের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। তাই সরকারকে দ্রুত আন্তরিকভাবে এ হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়ার আহবান জানান তারা।
আন্দোলন চলাকালে গত ২ আগস্ট উত্তরা জসিম উদ্দিন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট উজ্জল জিসান। একই দিন মিরপুর এলাকায় মোহনা টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান ও রিপোর্টার লাঞ্চিত হন। গত ৪ ও ৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি, জিগাতলা, সাইন্সল্যাব, বাড্ডা, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রথম আলোর সাংবাদিক আহদেম দীপ্ত, এপির সাংবাদিক এএইচ আহাদসহ বেশ কিছু সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেসময় তারা হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশিত হয়।
মানববন্ধনে ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হারুন উর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, নিউজ টোয়েন্টিফোরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আঙ্গুর নাহার মন্টি, সারাবাংলা ডটনেটের নিউজ এডিটর জান্নাতুল ফেরদৌস মানু, একাত্তর টিভির নাদিয়া শারমিন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রাশেদ নিজামসহ কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই