গুজবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শুরুতেই ভুল ছাত্রলীগের!
৯ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৩১
।। কবিরুল ইসলাম কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : গুজবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তবে সে লড়াইয়ের শুরুতেই ভুল করে বসেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই সহযোগী সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। গুজবের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা এমন একটি ছবি সামনে এনেছেন, যেটিও একটি ভুল ছবি হিসেবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনী বুধবার (৮ আগস্ট) তার ফেসবুক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে গুজবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেন। এই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চলো যাই যুদ্ধে, গুজবের বিরুদ্ধে।’
এতে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গুজবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।
তবে এই আহ্বানে যে ছবিটি পোস্ট করেন, খুব দ্রুতই সেটি একটি ভুল ছবি বলে প্রমাণিত হয়। দেখা গেছে এটি ছয় বছর আগের তোলা একটি ছবি। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যম সয়লাব হতেও বেশি সময় লাগেনি।
সেখানে থেকেই সমালোচকরা একটি প্রশ্ন সামনে আনেন- গুজবের বিরুদ্ধে ডাক দিয়ে ছাত্রলীগ নিজেও কী গুজব ছড়াচ্ছে?
ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক অবশ্য জানান, তার পোস্টের ছবিটি তিনি শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলমের একটি পোস্ট থেকে।
ওদিকে আশরাফুল আলম খোকন ছবিটি পোস্ট করেন দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি ছবি থেকে। দৈনিক জনকণ্ঠ তার ছবির ক্যাপশানে জানায়- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে ধানমন্ডিতে হামলাকারী, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের (লাল চিহ্নিত) যুগ্ম-আহবায়ক শিবলী।
একটি মূলধারার সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই ছবিটি সঙ্গত কারণেই সরকার পক্ষের সকলের কাছে গুরুত্ব পায়।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনও ওই একই ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন।
তার একদিন পরেই সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসে— সেটি মূলত ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছবি। সেই সময়ের একটি দৈনিকে প্রকাশিত ছবিটি ক্যাপশানসহ সামনে আসে। তাতে ছাত্রলীগেরই দুই গ্রুপের সংঘর্ষের চিত্র ছিল এটি।
এ অবস্থায় দৈনিক জনকণ্ঠ ছবিটি প্রকাশের জন্য জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ছবিটি প্রত্যাহার করে নেয়।
কিন্তু ততক্ষণে সমালোচনার ঝড় ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বলা হয় গুজব দমনে ছাত্রলীগ নিজে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এমন ভুল কী করে করল?
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলা.নেট’র। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক পোস্ট থেকেই আমরা ছবিটি শেয়ার করেছি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ছবিটি এভাবেই এসেছে। তবে পরে জানতে পেরেছি এটি ভুল ছবি ছিল। ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) হিসেবে বলছি, আমি আমার সজ্ঞানে ইনটেনশনালি কোনো ফেক নিউজ বা ছবি শেয়ার করি না। যেটা হয়েছে তা ভুলবশতঃ হয়েছে।’
আর আশরাফুল আলম খোকন সারাবাংলাকে বলেন, একটি মূলধারার সংবাদপত্র এমন একটি ভুল করলে সেখানে কী করার আছে। সংবাদমাধ্যমগুলিই বরং গুজব ভিত্তিক অনেক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা অনভিপ্রেত।
তবে একটু বিচার বিশ্লেষণ করেই ছবিটি প্রকাশ করা উচিত ছিল, এমন মত দিচ্ছেন ছাত্রলীগেরই অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একটি ছবি দিয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করা হতে পারে। তাই ছবিটি আমাকে যাছাই-বাছাই করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়ে শেয়ার দিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটা কঠিন কিছু নয়। হুজুগে প্রবণতা থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারীকে বিষয়টি অভহিত করলে তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘তারা হয়তো বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগ নেয়নি। তাদের বলব, যেহেতু নতুন ও আধুনিক অনেক প্রযুক্তি রয়েছে, তাই বিষয়গুলো সত্য না কি অসত্য তা যাচাই করার জন্য এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।’
তবে এই সময়ে বিএনপি-জামাত এত বেশি গুজব ছড়াচ্ছে এমন মত দিয়ে এই সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, ‘মানুষ জানে, গুজবের মধ্য দিয়ে কাদের সৃষ্টি হয়েছে। এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা গুজব ছড়ায়। মিথ্যা কারা ছড়ায়। যাদের জন্ম বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে, তারা কখনও সত্য ফেস করতে পারে না। সত্যের ভয়ে তারা প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও গুজবের মধ্যে থাকে।’
তবে ছাত্রলীগকে এই গুজব ও হুজুগের সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে, বলেন বাহাদুর ব্যাপারী।
সারাবাংলা/এসআই