‘মন্ত্রী-এমপি যেই হোক, কাউকে খাতির করবেন না’
৯ আগস্ট ২০১৮ ১৬:৫২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘কোনো লাইসেন্সবিহীন গাড়ি রাজধানী ঢাকাসহ যেন সারাদেশে চলতে না পারে। মন্ত্রী বা এমপি— যেই হোক, আপনারা কোনো খাতির করবেন না। এটা আমি হলেও করবেন না।’
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন হোক, এটা ১৪দল চায় উল্লেখ করে বিআরটির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আপনারা অনেক অনিয়ম করেছেন। এখন সময় এসে গেছে, কিশোররা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। কোনো মন্ত্রী হোক, এমপি হোক; সে যেই হোক না কেন, রাস্তায় যখন গাড়ি চালাবে তার ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকতে হবে, ফিটনেস থাকতে হবে। আপনারা কোন খাতির কাউকে করবেন না। এটা আমি হলেও করবেন না, অন্য কেউ হলেও করবেন না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা ট্রাফিকের কাজ করে তাদের আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ও ফিটনেস ছাড়া যাতে কোনো চালক গাড়ি চালাতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকা শহরে মোটরসাইকেলের মিছিল চলছে, এসব মোটরসাইকেলের লাইসেন্স চেক করার পাশাপাশি হেলমেটবিহীন চলাচল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করারও আহ্বান জানান তিনি। একই সাথে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নাগরিকদের সচেতনতা ও সহযোগিতা কামনা করেন নাসিম।
নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আগামী নির্বাচন অবশ্যই ঠিকমতো হবে। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত করে কোনো লাভ হবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে জনগণের যে রায় হবে সেটা আমরা গ্রহণ করে নেবো।’ এছাড়াও আগামী ঈদের পরে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে ১৪ দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে বলছি, আমিও যদি কোনো আইন লঙ্ঘন করি, এজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। নিয়ম মানতে হলে কঠোর হতে হবে। কঠোর ছাড়া নিয়ম বাস্তবায়ন সম্ভব না।’
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ভর করে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এই আন্দোলনের উপর ভর করে সারাদেশে কালো থাবা বিস্তার করে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের সেই কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে আমাদের দেশের মানুষ ও সাংবাদিকরা সচেতনতা দেখিয়েছে এবং সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে।’
কারো নাম উল্লেখ না করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কয়েকজন নামকরা রাজনীতিক উস্কানিমূলক কথাবর্তা বলেছে। একজন মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন কিন্তু সে আবোল-তাবোল বকাবকি করে। আজ তারা সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে।’
এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। নিষ্পাপ শিশুদের উপর ভর করে তারা লাশ চেয়েছিল? যে লাশের উপর ভর করে তারা একটি অশুভ শক্তির অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশবাসী সচেতন ছিল বিধায় তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ (একাংশের) শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, অসিত বরণ রায়, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও