Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রশ্ন বিক্রির টাকাতেই বাড়ি-গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্স


৯ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৫৪

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: বিসিএস, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক ও বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের ৯ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি পুলিশ জানিয়েছে, তারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। প্রশ্ন বিক্রির টাকা দিয়েই একেকজন আলিশান বাড়ি করেছেন, কেউ দামি গাড়ি কিনেছের আবার কেউ ব্যাংকে কোটি টাকা জমিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় সিআইডি মালিবাগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম এ সব তথ্য জানান।

বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, গত বছরের ১৯ অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। ২০ অক্টোবর মামলা হলে মাস্টার মাইন্ড নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামীসহ চক্রের ২৮ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাসের সম্পৃক্ততা আসে। গণমাধ্যমে তার নাম প্রকাশিত হলে তিনি গা ঢাকা দেন।

এরপর গত শুক্রবার (৩ আগস্ট) অলিপ কুমার বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার দেওয়া তথ্যমতেই গতকাল রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন সিরাজগঞ্জ বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত ইব্রাহীম, ৩৮ তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আইয়ুক আলী বাঁধন, রাজধানীর অগ্রনী স্কুলের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, অফিস সহায়ক আনোয়ার হোসেন মজুমদার ও নুরুল ইসলাম, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুরের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম এবং পিয়ন হাসমত আলী শিকদার।

বিজ্ঞাপন

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, জড়িত চক্রের সদস্যদের মধ্যে ইব্রাহীম প্রায় ১০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তিনি ৩৬ লাখ টাকার দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬ তম বিসিএস নন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। খুলনার মুজগুন্নী এলাকায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমির ওপর চারতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। নড়াইলে তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিসিএস, বিভিন্ন ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে শতাধিক ব্যক্তিকে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন ইব্রাহীম।

অলিপ, মোস্তফা, ইব্রাহীম ও বাঁধনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার নজরুল বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের দুটি কক্ষে বসে অভিজ্ঞদের দিয়ে সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করত।

তাদের ব্যাংক হিসেবে জব্দ করে দেখা গেছে, কোটি কোটি টাকা তাদের হিসেবে জমা রয়েছে। অলিপ হচ্ছে এই চক্রের মাস্টার মাইন্ড। ৪ বছরে তিনি ব্যাংকে ৩ কোটি টাকা জমিয়েছেন। গতকাল হোসনে আরা বেগম ও হাসমত আলী গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার কয়েক কপি প্রশ্নপত্র ও ৬০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, স্কুলের পিয়ন যখন পরীক্ষার্থীদের পানি খাওয়াতে যান তখন উত্তরপত্র নিয়ে যান। অনেক স্কুল কলেজের শিক্ষকরাও এ কাজে জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আগামীতে এ ধরনের জালিয়াতি কমে আসবে বলে আশা করছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। তাদের কেউ বিসিএস, কেউ ব্যাংক আবার কেউ কেউ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পদে চাকরি করছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

জালিয়াত চক্র প্রশ্নফাঁস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর