Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশকে না জানিয়ে কেন নৈশভোজে বার্নিকাট, প্রশ্ন ১৪ দলের


৯ আগস্ট ২০১৮ ১৯:৪৭

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজের অন্তরালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটসহ কয়েকজনের বৈঠক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ‘গুণ্ডাতন্ত্র’র বক্তব্যকে একই সূত্রে গাঁথা হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।

নেতারা মনে করছেন, মার্শা বার্নিকাট সরকারের ওপর দায়ভার চাপাতেই প্রভাবশালী একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হওয়া সত্ত্বেও কোনো সংস্থাকে ইনফর্ম না করে প্রটোকল ভেঙে নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন। সে ধারাবাহিকতায় ড. কামাল হোসেনও জোর গলায় দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সারাবাংলাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ (একাংশের) শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, অসিত বরণ রায়সহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, মার্শা বার্নিকাট ও কামাল হোসেন ইস্যুতে কথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।

বিজ্ঞাপন

গত শনিবার রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে নৈশভোজ করে বের হওয়ার সময় হামলার মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী গাড়ি। কয়েকজন মোটর সাইকেল আরোহী বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। সেই রাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ঢিল ছোড়া হয়।

এ বিষয়ে ১৪ দলের নেতারা বলেন, উনি (মার্শা বার্নিকাট) সরকারের কোনো সংস্থাকে কোনো রকম নোটিফাই (নোটিশ) ছাড়াই সেখানে যান। যেখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে একটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে উনি ওই বৈঠকে গেলেন কেন? আর যারা নৈশভোজের আয়োজক তারাও কেন সরকারের কোনো সংস্থাকে ইনফর্ম করল না? এই ঘটনার দায় কে নেবে?’

১৪ দল নেতাদের প্রশ্ন— বার্নিকাট প্রভাবশালী রাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রদূত। উনি তো সংশ্লিষ্ট থানায় ইনফর্ম করে যেতে পারতেন। কেন উনি এভাবে প্রটোকল ভেঙে গেলেন? বাংলাদেশ সরকার ওনার চলাচলের ওপর তো কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি? তাহলে এত লুকোচুরি কেন? ওনার এই গোপনীয়তাই প্রমাণ করে বৈঠকটি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ ছিল? আবার এই দেশে তাদের অনুগত অনুসারী ড. কামালও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে গলা ফাটানো শুরু করেছেন?

কোন লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাজধানী ঢাকাসহ যেন সারাদেশে চলতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ পরিববহন খাত সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়। এমনকি কেউ যদি মন্ত্রী, এমপি বা যত প্রভাবশালীই হোক কারো গাড়ির চালকের লাইসেন্স বা উল্টো পথে চলাচল করলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৪ দলের নেতারা আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম কারো নাম উল্লেখ না করে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘চক্রান্ত চলছে, চক্রান্ত আরও গভীর হবে।’ তারা চক্রান্তে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু তারা আবারও চক্রান্ত করতে পারে সে জন্য দেশবাসীসহ সকল গণতান্ত্রিক শক্তির দলগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

শনিবার রাতে হামলার পরদিন রোববার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, মোটরসাইকেল আরোহীসহ একদল লোক শনিবার মোহাম্মদপুর এলাকায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বহনকারী দূতাবাসের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলায় বার্নিকাটের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের দাবি, সুজন সম্পাদকের বাসায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের যাওয়ার খবরটি তাদের অবহিত করা হয়নি। রাত ১১টার দিকে বার্নিকাট যখন বদিউল আলমের বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠছিলেন তখন একদল লোক হামলা করে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে দুই ব্যক্তির কলহের জেরে ওই এলাকায় ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল।’

তবে জিডিটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হয়েছে বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জানান।

বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার বিষয়ে এরই নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বার্নিকাটের ওপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল বলেছেন, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও গুণ্ডাতন্ত্র মুক্ত হোক। আমি এই গুণ্ডাতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই না। আমি চাই যে, আমাকে গুলি করে মারা হোক। তাহলে অন্তত বলতে পারব গুণ্ডাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মারা গেছি।

সারাবাংলা/এনআর/একে

বার্নিকাট মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর