হজের যত পরিভাষা
১০ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৪০
।। জহির উদ্দিন বাবর ।।
সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর হজ জীবনে একবারই ফরজ। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তারা বারবার হজে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিকতাই হজ। হজের বিধানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমন কিছু পরিভাষা ও স্থানের নাম যা অনেকের জন্য বোঝা একটু কঠিন। বিশেষ করে যারা নতুন হজে যাচ্ছেন তাদের এসব পরিভাষা সম্পর্কে আগেই ধারণা থাকা চাই। এখানে হজ সংশ্লিষ্ট কিছু পরিভাষার পরিচয় তুলে ধরা হলো:
ইহরাম: ইহরাম অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ বা ওমরার নিয়ত করা। ইহরাম অবস্থায় হালাল বা বৈধ অনেক কাজও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। পুরুষেরা সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে ইহরাম বাঁধেন। তবে নারীদের জন্য আলাদা কোনো কাপড় পরতে হয় না।
হারাম শরিফ: পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশের বিশাল মসজিদকে বলা হয় হারাম বা হেরেম শরিফ। এখানে হারাম অর্থ সম্মানিত। এই আঙিনায় অবস্থানকালে কাবার সম্মান বজায় রাখতে হয়।
তালবিয়াহ: তালবিয়াহ হলো ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ এই দোয়াটি। ইহরামের কাপড় গায়ে জড়ানোর পর থেকেই শুরু হয় তালবিয়াহ পাঠ।
তাওয়াফ: তাওয়াফ অর্থ প্রদক্ষিণ করা। হাজরে আসওয়াদের কোণ থেকে সর্বদা বাঁ হাত কাবাঘরের দিকে রেখে এই তাওয়াফ করতে হয়।
সায়ি: সায়ি অর্থ হাঁটা ও দৌড়ানোর মাঝামাঝি অবস্থায় দ্রুত পায়ে হেঁটে চলা। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দ্রুতপদে অতিক্রম করাকে সায়ি বলে।
রমল: রমল শব্দের অর্থ হাঁটা ও দৌড়ানের মাঝামাঝি অবস্থায় বীরদর্পে চলা। যেসব তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয় সেসব তাওয়াফের প্রথম চক্করে বীরবিক্রমে কাঁধ হেলিয়ে সজোরে ঘন ঘন পা ফেলে দ্রুতপদে চলাকে ‘রমল’ বলে।
মাকামে ইবরাহিম: কাবাঘরের পূর্ব দিকে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন সংবলিত একটি পাথর কাঁচের বেড়ির মধ্যে রাখা আছে। এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। এই রক্ষিত পাথরের আশপাশই মাকামে ইবরাহিম নামে পরিচিত।
হাতিম: কাবা-শরিফ সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা জায়গাকে ‘হাতিম’ বলে।
মিজাবে রহমত: মিজাব আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নল। হাতিমের মধ্যে একটি পাথরের ওপর পবিত্র কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য যে স্বর্ণের নল আছে, সেই নলটিকেই মিজাবে রহমত বলে। কখনও বৃষ্টি হলে এই বরকতময় পানি সংগ্রহের জন্য ভিড় জমে যায়।
মুলতাজিম: পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একখণ্ড বেহেশতি পাথর লাগানো আছে। এখান থেকে কাবাঘরের দরজা পর্যন্ত দেয়ালের অংশটিকে মুলতাজিম বলে।
জামারাত: মিনায় শয়তানকে পাথর মারার জন্য নির্ধারিত স্থান। এখানে হাজিদের নিয়মমতো শয়তানকে পাথর মারতে হয়।
রমি: রমি শব্দের অর্থ ছোড়া বা নিক্ষেপ করা। মিনায় শয়তানকে পাথর মারাকে রমি বলে।
দম: এহরাম অবস্থায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি বা নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার ক্ষতিপূরণস্বরূপ যে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায় তাকে ‘দম’ বলে।
মিকাত: পবিত্র ভূমি মক্কা শরিফে প্রবেশের জন্য চারদিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশেষ জায়গাকে সীমারেখা করে পোস্ট বা খুঁটি পুঁতে রাখা আছে। এদের মিকাত বলা হয়। হজ ও ওমরাকারীদের এই স্থান অতিক্রম করার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
সারাবাংলা/টিআর