এক থানায় চার বছর, আনন্দ-উল্লাসে উদযাপন
১০ আগস্ট ২০১৮ ০৯:২৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের এক থানায় চার বছর থাকার পূর্তির উদযাপন করা হয়েছে। নগরীর পাঁচলাইশ থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সেলিম ওসি মহি উদ্দিন মাহমুদ জন্য এই আয়োজন করেন। গত মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) নগরীর অভিজাত একটি হোটেলে কেক কেটে, নাচ-গানের মাধ্যমে এই উদযাপন করা হয়।
তবে, একই কর্মস্থলে চার বছর পূর্তির এই আয়োজন জানাজানির পর এখন পুলিশের অভ্যন্তরে এবং সাধারণের মাঝে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে শোকের মাস আগস্টে এই ধরনের আনন্দ আয়োজন নিয়ে চলছে সমালোচনা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চারজন কাউন্সিলর। এরা হলেন, সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, গিয়াস উদ্দিন, মোরশেদ আলম ও আনজুমান আরা বেগম।
সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ব্যবসায়ী সেলিম সাহেবের আমন্ত্রণে আমরা গিয়েছিলাম। ওয়েল পার্ক হোটেলে খাওয়া দাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। আমরা অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছি।
আনজুমান আরা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের সদস্যরা ছিলেন। সব মিলিয়ে ৫০ জনের বেশি লোক হয়েছিল। ওসি সাহেব কেক কেটেছেন। গান, বক্তৃতার আয়োজন ছিল। আমরা সবাই ওসি সাহেবের জন্য শুভকামনা জানিয়েছি।
নগরীর ও আর নিজাম রোডে ওয়েল গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়েল পার্ক হোটেলে গত মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) রাত ৮ টা থেকে প্রায় সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান। এতে পুলিশের উর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। অন্যান্য থানার ওসিদের মধ্যেও কেউ ছিলেন না। নগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট জোনের উপ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ খানকে দাওয়াত দেওয়া হলেও তিনি যাননি।
অনুষ্ঠানে পাঁচলাইশ থানা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সকল সদস্য, সংশ্লিষ্ট ৬টি বিট পুলিশিংয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, চার কাউন্সিলর এবং ব্যবসায়ী সেলিম ও ওসি’র ঘনিষ্ঠজনরা ছিলেন। চট্টগ্রামের দুজন তারকা সঙ্গীতশিল্পী গান পরিবেশন করেন। বিভিন্নজন ওসিকে শুভেচ্ছা উপহারও দেন বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে।
ওসি’র দায়িত্ব পালনের চার বছর পূর্তি অনুষ্ঠান করার কথা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী সেলিম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ওসি সাহেব আমাদের পুরো থানা এলাকার জন্য অনেক করেছেন। তিনি শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর রেখেছেন। এলাকাবাসীও উনাকে খুব সম্মান করেন। উনি এলাকার জন্য যা করেছেন, সেই প্রতিদান দেওয়া তো সম্ভব নয়। উনার তুলনায় আমরা সামান্য করতে পেরেছি।
পুরো অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় হওয়া কয়েক লাখ টাকার মধ্যে বড় অংশের যোগান দিয়েছেন সেলিম। বাকি টাকার যোগান ৬টি বিট পুলিশিংয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা দিয়েছেন বলে সেলিম নিজেই জানিয়েছেন।
তবে ওসি মহি উদ্দিন মাহমুদ এই আয়োজনের কথা আগে থেকে জানতেন না বলে দাবি করেছেন। ওসি সারাবাংলাকে বলেন, আমাকে ৮টায় যাবার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আমার যেতে ঘন্টা দুয়েক দেরি হয়েছে। গিয়ে দেখি তারা আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছেন। সেখানে আমার জন্য বড় আয়োজন তারা করে রেখেছেন। আমি এর কিছুই জানতাম না।
২০১৪ সালের ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদেন মহি উদ্দিন মাহমুদ। একই থানায় এত দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নগরীতে একই পদমর্যাদার আর কোনো পুলিশ কর্মকর্তার নেই।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) গত চার বছরে চারজন কমিশনার বদলি হলেও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ওসি মহি উদ্দিন মাহমুদের কর্মস্থল নড়চড় হয়নি। সাধারণত নতুন কমিশনার যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন থানায় ওসি পদে রদবদলের ঘটনা ঘটে। কিন্তু মহি উদ্দিন মাহমুদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে।
অবশ্য বাংলাদেশ পুলিশ যে বিধি মোতাবেক পরিচালিত হয়, সেই পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশে (পিআরবি) একজন ওসি কত বছর একই থানায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তার সময়সীমা উল্লেখ নেই। ওসিদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে সদ্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক দুটি পরিপত্র জারি করেছিলেন। তবে এতেও বিষয়টি পরিস্কার করা হয়নি।
২০১৫ সালের ১৮ মে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়, একই ব্যক্তিকে একই থানায় দ্বিতীয়বার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। ওসি হিসেবে বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনের পর তাকে আর এই পদে পদায়ন করা যাবে না।
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর জারি করা আরেক পরিপত্রে বলা হয়েছে, সার্ভিসেস এন্ড জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট অর্ডার, ১৯৬৮ এর ১০(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এবং বাস্তবতা পর্যালোচনায় কোন তুচ্ছ কারণে কোন থানার ওসিকে যোগদানের তারিখ থেকে অন্যুন ১৮ মাস পূর্বে বদলি, প্রত্যাহার বা অন্যত্র সংযুক্ত করা যাবে না। প্রত্যাহারের প্রয়োজন হলে তার বিস্তারিত কারণ প্রদর্শনপূর্বক আইজিপি বরাবরে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সারাবাংলা/আরডি/জেএএম