Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানিকগঞ্জে মানুষের মুখে মুখে রাজা বাবু’র নাম


১২ আগস্ট ২০১৮ ০৮:২১

।। রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামে এখন মানুষের মুখে মুখে রাজা বাবুর নাম। তাকে একনজর দেখার জন্য গ্রামবাসীই শুধু নয়, আশপাশের গ্রাম থেকেও ছুটে আসছেন মানুষ। একবার দেখেই তাদের সবার মুখে ঝরে পড়ছে রাজা বাবুর প্রশংসা।

এই রাজা বাবু কোনো ব্যক্তি নয়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বড় করে তোলা এক ষাঁড়। তার উচ্চতা ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি, লম্বায় ৮ ফুট, বুকের মাপ ১২ ফুট। ওজন ৫২ মণ। হাঁটলে আশপাশের সবাইকে তটস্থ থাকতে হয়। তার রাজকীয় চলনে মুগ্ধতাও জাগে। দেলুয়া গ্রামের খামারি নান্নু মিয়ার এই ষাঁড়টিকে নিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে গেছে এলাকায়। নান্নু মিয়া বলছেন, ২০ থেকে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন রাজা বাবুকে।

সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের খান্নু মিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সাদা-কালো রঙের বিশাল দেহের অধিকারী ষাঁড় রাজা বাবুকে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজা বাবুকে সযত্নে লালন-পালন করছেন নান্নু মিয়া ও তার পরিবাদের সদস্যরা। তবে মূলত রাজা বাবুর পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত তার মেয়ে ইতি আক্তার। শুধু তাই নয়, রাজা বাবুকে সুস্থ রাখতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকও রাখা হয়েছে। পুলিশও রয়েছে তার নিরাপত্তায়!

রাজা বাবুকে দেখে সবারই প্রশ্ন, কিভাবে এই বিশাল ষাঁড় বড় করেছে নান্নু মিয়া। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই নান্নু মিয়ার কাছে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, চার বছর আগে ঢাকার কেরানিগঞ্জ হাট থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনে আনেন রাজা বাবুকে। এরপর প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠেছে সে। তবে সাধারণ খড়-ভূষি খাইয়ে তাকে এত বড় করা হয়নি। এর পাশাপাশি তার নিয়মিত খাবার ছিল চিড়া, গুড়, আপেল, মাল্টা, মিষ্টি কুমড়া, সবরি কলা, বিচি কলা ও ছোলা।

বিজ্ঞাপন

নান্নু মিয়া জানান, প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে রাজা বাবুর খাবারের জন্য। সেই হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার পেছনে।

প্রতিবছরই ঈদুল আজহাকে মাথায় রেখে তিন-চারটা করে গরু লালন-পালন করতেন বলে জানান নান্নু মিয়া। এটাই তার আয়-রোজগারের অন্যতম পথ। তাই ছোট মেয়ে ইতি আক্তারকে সাভার যুব উন্নয়ন ও সাটুরিয়া প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করণের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছেন। রাজা বাবুর দেখাশোনার দায়িত্বও রয়েছে সেই মেয়ের ওপরই। পাশাপাশি সাটুরিয়া প্রাণিসম্পদ বিভাগও তাকে সব ধরনের সহায়তা করছে জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নান্নু মিয়া বলেন, আমার সব গরুরই একটা করে নাম দেই। এটা কেনার পরই নাম দিয়েছি রাজা বাবু। রাজকীয় চলনের মাধ্যমে রাজা বাবু সেই নাম সার্থক করেছে বলেও খুশি তিনি।

ইতি আক্তার সারাবাংলা’কে বলেন, রাজা বাবু আমার পরিবারের একজন সদস্য। ভাইয়ের মতো ওকে লালন-পালন করছি। বিক্রি হবে ঠিকই, কিন্ত খুব কষ্ট হবে। মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ করে ফেলেছি। এর আগেও ‘লক্ষ্মী সোনা’ নামে একটি ষাঁড় পালন করেছিলাম। বিক্রির পর অনেক কেঁদেছি। কিন্ত কিছুই যে করার থাকে না।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম সারাবাংলা’কে বলেন, রাজা বাবু হনস্টেইনি ফ্রিজিয়াম জাতের গরু। সামনের পা থেকে কুঁজ পর্যন্ত এর উচ্চতা ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি, লেজের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত লম্বায় ৮ ফুট, বুকের মাপ ১২ ফুট। সে হিসাবে এর ওজন হবে ৫০ থেকে ৫২ মণ। কোনো ধরনের হরমোন কিংবা ওষুধ রাজা বাবুকে দেওয়া হয়নি বলে জানালেন তিনিও।

বিজ্ঞাপন

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. খোরশেদ আলম বলেন, দুই বছর ধরে রাজাবাবুর চিকিৎসার বিষয়টি আমরাই দেখাশুনা করছি। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম প্রতিদিনই রাজাবাবুর খবর নিয়েছেন।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুর রহমান বলেন, রাজা বাবু একটি বিশাল গরু। সেটি চুরি হয়ে যাওয়ার যেমন আশঙ্কা আছে, তেমনি কেউ শত্রুতা করেও এর ক্ষতি করতে পারে। তাই আমরা রাজা বাবুর প্রতি নজর রাখছি। বিশেষ করে রাতে টহল পার্টিকে সতর্ক রাখা হয়।

সারাবাংলা/টিআর

কোরবানীর গরু রাজাবাবু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর