ছোট শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
১২ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৫১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ছোট শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই আশা করি, প্রত্যেকেই তথা বড়রা স্ব স্ব স্থানে যার যার নিজ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবেন- এমন আহ্বান করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ (এসআরসিসি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কলেজ সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রুপ ছবিও তোলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বর ও কাপুরোষিতভাবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর দুঃশাসনের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পরে যখন সরকারে আসি, সরকারে এসে চেষ্টা করেছি এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করার। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে বাঁচার একটি ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ আমার জীবনে রাজনৈতিক লক্ষ্য একটাই, এদেশের মানুষকে একটা সুন্দর জীবন দান করা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারি, সেই কাজগুলো করা। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে সবসময় চেষ্টা করেছি। আমরা সবসময় চাই, দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতি উন্নত করতে পারে না। কোনো দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না।’
আন্ডারপাসের নকশার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ডিজাইনটা আগেই করা ছিল? কিন্তু এখানে একটা সমস্যা ছিল। এই সমস্যাটা এত ক্ষুদ্র সমস্যা ছিল, সেটা আমি জানতাম না। এই জায়গা কার, বাংলাদেশে এই একটা সমস্যা। রাস্তা কার, জায়গা কার, লেক থাকলে পানি কার, পার্ক কার, লেকের ভিতরে মাটি কার? এ নিয়ে মাঝে মাঝে একটা বিতর্ক হয়। আশা করি, এই বিতর্কগুলো আর হওয়া উচিত না। এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।’
সরকারপ্রধান হিসেবে সমস্যাটি অবহিত হওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই প্ল্যানটা তৈরি করে বসে আছে? তাই সবার প্রতি অনুরোধ করব। আপনারা যদি কোন সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, আমি তো ২৪ ঘণ্টায়ই আছি। ২৪ ঘণ্টা না, হয়ত ৫/৬ ঘণ্টা আমার নিজের থাকে। বাকি সময় আমাকে পাবেন। যখনই চান, আমার মোবাইল ফোন আছে, ফোন দিলেও পাবেন। আপনারা যদি একটু খবর দেন বা বলেন যে, এই সমস্যা। তাহলে একটা সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি। কিন্তু এই কাজগুলোর যেন কালক্ষেপণ না হয়। আজকে যদি এই কালক্ষেপণটা না হতো, তহালে হয়ত এই দুর্ঘটনাটা হতো না। এইভাবে দুইটা জীবন যেত না।’
চালকদের লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও যদি ওভারটেক করতে যায়, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নিতে হবে। পুলিশের একটা দায়িত্ব। আইজি সাহেব, এখানে উপস্থিত আছেন। সেই ভাবেই আপনাকে নির্দেশ দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্যামেরার মাধ্যমে রাস্তায় কেউ কোনোরকম অনিয়ম করছে কি না? সেটার দেখার ব্যবস্থা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে পারে সেজন্য শিক্ষক ও ট্রাফিকদের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বলেন, ‘যে বাবা-মা সন্তান হারিয়েছেন, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না। কারণ আমি তো সব হারিয়েছি, আমি জানি হারাবার বেদনা কি? তবু আমি চেষ্টা করেছি। যারা এখনো আহত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।’
ছাত্র-ছাত্রীদের ট্রাফিক রুলস মেনে চলে মন দিয়ে লেখাপড়া শেখার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন ‘কারণ তোমরা ছোটমণিরা, তোমরাই তো আমাদের ভবিষ্যত। আজকে দিনরাত পরিশ্রম করি কাদের জন্য? তোমাদের জন্য। তোমাদের ভবিষ্যত যেন সুন্দর হয়, আমরা যে কষ্ট পেয়েছি এই কষ্ট যেন তোমরা না পাও। তোমাদের জীবনটা সুন্দর হবে। উন্নত হবে। তোমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে সেটাই আমরা আশা করি। আর আগামী দিনে এই দেশের নেতৃত্ব তোমরাই দেবে। তোমাদের মাঝ থেকেই তো আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হবে, সেনাপ্রধান হবে, সেনা অফিসার হবে, বিমান বাহিনী প্রধান হবে, নৌ বাহিনীর প্রধান হবে, অনেকে অনেক কিছু হবে। আমরা সেটাই আশা করি? যতটুকু আমার ছিল করে যাচ্ছি, এরপরে তোমরা এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কারণ এই দেশকে আমরা তৈরি করতে চাই। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেটা চেয়েছিলেন। ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর, তোমরাই হবে। সেটাই আমি দোয়া করি। আমার দোয়া আর্শীবাদ সবসময় তোমাদের সাথে থাকবে।’
২০২১ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। তখন তো আর বেঁচে থাকব না। বুড়ো হয়ে গেছি। ২০৪১ সাল পর্যন্ত সেটা তো দেখতে পারব না? কিন্তু সেই বাংলাদেশ হবে তোমাদের বাংলাদেশ। তোমরা সেইভাবে নিজেকে গড়ে তোল। যেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি। আজকে আমাদের ছোট শিশুরা আমাদের যে চোখ খুলে দিয়েছে, আমি আশা করি, প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থানে যার যার নিজ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবেন। পথচারীরা নিশ্চয়ই রাস্তার নিয়ম কানুন মেনে পথ চলাচল করবেন। চালক-হেলপারও যেন সকল নিয়ম কানুন মেনে গাড়ি চালাবেন সেটাই আমরা আশা করি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আরও পড়ুন
দায়ী চালকদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী
গুজব সৃষ্টিকারীদের সহ্য করা হবে না: প্রধানমন্ত্রী