স্কুল ফাঁকি দেওয়াই কাল হলো দু’জনের
১২ আগস্ট ২০১৮ ২৩:০৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আদনান, মাহফুজ ও আরিফ তিনজন কাকরাইল উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। আরিফ ব্যবসায়ী শাখায় পড়লেও, আদনান ও মাহফুজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। তারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ড্রেস পরে রাজধানীর রমনা পার্কে খেলাধুলা করতে যায়। খেলা শেষে লেকের পানিতে শরীর পরিষ্কার করতে গেলে সেখানেই ডুবে তাদের দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়।
আরিফ জানায়, আজ স্কুলে আদনান ও মাহফুজের রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিল। দুই জনই দুই বিষয়ে ফেল করেছে। রেজাল্ট শিট বাসায় দেখাতে হবে দেখে স্কুলে না গিয়ে দুপুর ১২টার দিকে রমনা আস্থাচলের গেট দিয়ে তারা পার্কে ঢুকে পড়ে। পরে তাদের কাছে থাকা টেপ টেনিস বল দিয়ে খেলাধুলা শুরু করে। খেলা শেষ করে বেলা ৩টার দিকে শরীরের কাদা ময়লা পরিস্কারের জন্য পুকুরে নামে। মাহফুজ আর আদনান সাঁতার জানতো না। আদনান লেকের পানির কিছুটা দূরে গিয়ে পানি খেতে থাকে। পরে মাহফুজ এগিয়ে গেলে আদনান তাকে জড়িয়ে ধরে। তখনই তারা দুজন পানিতে তলিয়ে যায়।
পথচারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের এই অবস্থা দেখে ট্রিপল নাইনে ফোন করি। সেখান থেকে ফোন ধরে বলে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিতে। তখন সেখানে কয়েকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে নাই। তখন নিজেরাই পানিতে নেমে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যু খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন আদনানের দুলাভাই নজরুল ইসলাম মুন্না এবং মাহফুজের বাবা মাসুদ মিয়া।
আদনানের দুলাভাই জানান, তাদের বাসা মালিবাগের গুলবাগে। মা নাসিমা বেগম গত ২০০৮ সালে মারা গেছেন। বাবা হাসানুজ্জামান চৌধুরী পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ পরিচালক ছিলেন। গত তিন বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি স্ট্রোক করে বিছানায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদনানের দুলাভাই মুন্না বুক চাপড়িয়ে বলতে থাকেন, ‘কেন তুই স্কুলে গেলিনা আদনান। কেন স্কুল ফাঁকি দিলি। স্কুলে গেলে আজ তোর এমন মৃত্যু হতোনা।’
মাহফুজের বাবা মাসুদ হাসপাতালে এসে ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার এতো দিনের ফসল নষ্ট হয়ে গেল।’
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আলী হোসেন বলেন, দুই পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে
সারাবাংলা/এসএসআর/এমএইচ