রাজধানীতে বাস সংকট, দুর্ভোগে যাত্রীরা
১৩ আগস্ট ২০১৮ ১৫:৩৩
|| সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ||
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন আর শ্রমিকদের অবরোধের পর রাজধানীতে ফের গণপরিবহন সচল হলেও বাস ও অন্যান্য গণ-পরিবহনের তীব্র সংকট রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের কড়া নজরদারিতে রাস্তায় গণ পরিবহন কম নামায় শহর জুড়ে সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মমুখী যাত্রীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিবহন সেবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোন বাসের দেখা না পাওয়ায় অনেকে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন অফিসে। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা করে কেউ রিকশা কিংবা ভ্যানে অফিসের পথে রওনা দিয়েছেন। কোথাও কোথাও মিনি পিকআপগুলোও এখন যাত্রীদের ভরসা হয়ে উঠেছে। তবে বাস সংকটে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা জিন্নাত আরা জেসমিন সারাবাংলাকে বলেন ,তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকাল দশটায় অফিস। তাই বাসা থেকে বের হয়েছেন আটটায় কিন্তু পৌনে দশটা পর্যন্ত কোনও বাসেই উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, সকাল আটটার দিকে মোড়ে এসে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকগুলো বাস চোখের সামনে দিয়ে গেলেও পুরুষদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে উঠতে পারিনি। আবার কিছু বাস আগে থেকেই ভরে আসছে। এখন আর তো অপেক্ষা করতে পারছি না। অফিস টাইম হয়ে গেছে। এখন রিকশা অথবা ভ্যানগাড়ি করে যাবো ভাবছি। নগরজুড়ে এমন ভোগান্তির সমাধান চান তিনি।
গণ-পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী জুড়ে বাস সংকটের কয়েকটি কারণের একটি হল ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পরিবহন সংগঠনগুলোর বিদ্যমান সক্রিয়তা। নগরজুড়ে গণ-পরিবহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহ ঘোষণার ফলে অর্ধেকের বেশি বাস রাস্তায় নামছে না। সেই সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোও এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার ফলে অযোগ্য বাসগুলো রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না তারা। আবার যেগুলো নামছে সেগুলোকে মামলা দেওয়া হচ্ছে কিংবা ডাম্পিংয়ে নেয়া হচ্ছে। এ কারণে গণ-পরিবহনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর আবদুল্লাহপুর, রামপুরা, মহাখালী, গাবতলি, যাত্রাবাড়ি, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন সংকট রয়েছে। কোথাও কোথাও গণপরিবহন খুব কম অথবা বাস চলাচল করলেও নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ -তিনগুণ ভাড়া। এতে কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও মিলছে না প্রতিকার। তাই নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রজনীগন্ধা পরিবহনের চালক সামসু সারাবাংলাকে বলেন, কাগজপত্র থাকলেও পুলিশ মামলা দিচ্ছে। তাই অনেক গাড়ি রাস্তায় নামছে না। তার মতে কাগজ না থাকলে মামলা দেয়া উচিত, তবে যাদের কাগজপত্র আছে তাদেরকে যেন হয়রানি না করে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বাস মালিকক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমরাও পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এ জন্য আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্থানে আমাদের ভিজিলেন্স কমিটি কাজ করছে। একারণে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো রাস্তায় নামতে না দেয়ায় বাস সংকট হচ্ছে। সেগুলো উপযুক্ত করে তবে সড়কে চলাচল করবে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ততদিন পরিবহন সংকটে সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
গত ৩০ জুলাই সকাল থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ০৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাস শ্রমিকদের অবরোধে গণ-পরিবহন চলাচল ছিল একেবারেই বন্ধ। এতে এক সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা।
সারাবাংলা /এসএইচ/এনএইচ
আরও পড়ুন,
আজও গণপরিবহন সংকট, দুর্ভোগে অফিসগামী মানুষ