Saturday 18 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এয়ার কন্ডিশন-ওয়াশিং মেশিনে ইয়াবা পাচার


১৬ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৫২ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৮ ১৮:১২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের ফলে ইয়াবা কারবারীরা কৌশল পাল্টে নতুন মাধ্যমে ইয়াবা বহন করছে। তারই অংশ হিসেবে এবার এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসছে মাদকের গডফাদাররা। এমন একটি ইয়াবা চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

এরা হলেন মমিনুল আলম (৩০), ফয়সাল আহম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১) তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১) ও সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০)।

বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে র‌্যাবের কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে এই চক্রটি নির্ধারিত কিছু লোকের মাধ্যমে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ভাড়া নেওয়া বাসায় মজুদ করত ইয়াবা। এই চক্রের মুল হোতারা ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আকাশপথে নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে। ইয়াবার টাকা টেকনাফের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন হতো হুন্ডির মাধ্যমে বলেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বুধবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী জহির আহমেদ ওরফে মৌলভী জহিরকে আটক করা হয়। তিনি টেকনাফ এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা যায়।

তার দেওয়া তথ্যমতে, এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাসার নিচ থেকে ফয়সাল, মিরাজ, সানি ও সঞ্জয় নামে আরও চারজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে জহিরের ঘনিষ্ট সহযোগী মমিনুলকে আটক করা হয়। মমিনুলের হেফাজত থেকে প্রায় ২ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তাদের দেওয়া তথ্যমতে অপর একটি বাসা থেকে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এসব টাকা ইয়াবা বিক্রি করে জমা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আটক হওয়া ব্যক্তিরা।

পরিচালক মুফতি মাহমুদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, জহিরের পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জহির ও তার বড় ছেলে বাবু গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। গত এপ্রিলে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ ছাড়া জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আব্দুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিনসহ টেকনাফের আরও ২০ থেকে ৩০ জন মিলে একটি সিন্ডিকেট করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এ সিন্ডিকেটে বার্মাইয়া আলম নামে একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি রাখাইনে বসবাস করছেন এবং টেকনাফেও তার একটি বাড়ি রয়েছে। মূলত তার মাধ্যমেই নৌপথে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের বিভিন্ন ল্যান্ডিং স্টেশনে ইয়াবাগুলো আনা হতো। আর মমিন ও আমিন ওইসব ইয়াবা গ্রহণ করত।

মুফতি মাহমুদ বলেন, টেকনাফ থেকে ফ্যান, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ভেতরে ইয়াবা লুকিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হতো। কুরিয়ারে ঝুঁকি থাকলে নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার ও সহকারীদের মাধ্যমেও ইয়াবার চালান পাঠাত তারা।

জহিরের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগে রোজিনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিএন্ডএফ ব্যবসা চালু করেন জহির। তখন সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। টেকনাফ এলাকার ইয়াবা ব্যবসার সব যোগাযোগ রক্ষা করতেন জহিরের স্ত্রী। আমিন ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

ফয়সাল আহম্মেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত। নিশান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র, সানি একটি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং সঞ্জয় পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাদের সবাইকে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান মুফতি মাহমুদ খান।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর