বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে খালেদা জিয়াও জড়িত: প্রধানমন্ত্রী
১৬ আগস্ট ২০১৮ ২৩:০৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান একাই নয়, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভার শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান শুরু থেকেই সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল বলেই পাকিস্তানিদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিল। যে কারণেই সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে বসে (ক্ষমতায়) গেল।’
কিন্তু আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের কী হয়েছিল? আমাদের বহু জ্ঞানী গুণী মানুষের কী হয়েছিল? একটা মিলিটারি ডিটেকটর, যে মেজর থেকে মাত্র তিন বছরের মধ্যে প্রমোশন পেয়ে মেজর জেনারেল হলো? এরপর সেনাপ্রধান থেকে রাতারাতি রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘আর সকলে খুব বাহবা দিতে শুরু করলো যে, সে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। যে মার্শাল’ল দিয়ে ক্ষমতায় আসে, সেখানে গণতন্ত্র আসে কীভাবে? যেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল হয়, সেখানে গণতন্ত্র হয় কীভাবে? যে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করে এবং নিজেকে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি করে, সে কী করে গণতন্ত্র দিতে পারে?’
বরং আজকে নির্বাচন নিয়ে যত অনিয়ম, দুর্নীতি ঋণখেলাপি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দিনের পর দিন টর্চার করা, গুম করা হত্যা করা, এটাই তো ছিল জিয়ার কাজ। এটাই তো সে করে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য আমি ১৯৮০ সালে লন্ডনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করি স্যার ম্যাকব্রাইট এবং স্যার টমাস উইলিয়ামকে দিয়ে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়ও বাংলাদেশে এসেছিলেন তদন্ত করতে। অথচ জিয়াউর রহমার তাদেরকে বাংলাদেশে আসার ভিসা দেয়নি। এই হত্যার তদন্তে জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিলেন কেন? যদি সে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত নাই থাকে তাহলে সে বাধা দেবে কেন? জিয়া সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল।’
দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় শাসনভাবে অধিষ্ঠিত হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্ত জিয়াউর রজমান এসে সেই বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ছেড়ে দিয়েছিল। রাজনৈতিকভাবে তাদের এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যাদের ভোটাধিকার ছিল না, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। যারাা পাকিস্তানি হিসাবে চলে গিয়েছিল তাদেরকেও পাকিস্তানি পাসপোর্টে এনে এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।’
‘আর জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি। তাদেরকে ভোট চুরি তাদেরকে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল জিয়ার স্ত্রী। তার অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে? জিয়া একাই না, তার স্ত্রীও ১৫ আগস্ট হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। এতে কোন সন্দেহ নাই’ বলেন শেখ হাসিনা
খুনিরা খুনিই হয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই খুনিরা ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং বারবার চেষ্টা করেছে। কাজেই এদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের কি উন্নতিটা হবে? দেশের মানুষ কি ন্যায়বিচার পাবে? অন্যায়ের মধ্যে দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা কোন ন্যায় বিচার করতে পারে না।’
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, কার্যনির্বাহী সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, আনোয়ার হোসেন।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সারাবাংলা/এনআর/একে