জরায়ুমুখের ক্যান্সারে মৃত্যু ৭ হাজার, আক্রান্ত হন ১২ হাজার জন
১৭ আগস্ট ২০১৮ ০৯:২১
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতি বছর জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি নারীর মৃত্যু হয়। আর নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হন ১২ হাজার নারী। হিসাব করে দেখা গেছে, জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অবস্থান পঞ্চম।
ক্যান্সারের তালিকায় বিশ্বে নারীদের সার্ভিকাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের স্থান চতুর্থ। আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে এর স্থান সপ্তম।
আন্তর্জাতিক গবেষণাধর্মী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার-এর (আইএআরসি) এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ ২৮ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, এর মধ্যে মারা যান ২ লাখ ৬৬ হাজার নারী। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ হাজার ৯৫৬ জন, মারা যান ৬ হাজার ৫৮২ জন।
চিকিৎসকরা বলেছেন, সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং চিকিৎসা পেলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
এদিকে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম স্থানে রয়েছে স্তন ক্যান্সার (২৭ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের অবস্থান দ্বিতীয় (১৭ দশমিক ৯ শতাংশ)। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন নারী সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন। তবে ৩০ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ঝুঁকি থাকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় হলো ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে টিকা নেওয়া এবং বয়স ৩০ বছর হলেই প্রতি তিন বছর পর পর ‘ভায়া’ (সার্ভিক্যাল ক্যান্সার শনাক্ত করতে এই পরীক্ষা করা হয়) পরীক্ষা করাতে হবে।
বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে, ২০ বছরের আগে গর্ভধারণ, সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় বিরতি না নিলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি থাকে। অপুষ্টিও একটি অন্যতম কারণ। অপুষ্টিতে ভুগলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) এই রোগের আরেকটি কারণ। এইচপিভি’র কারণে নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার ও পুরুষদের মুখ ও গলার ক্যান্সার হয়।
সার্ভিক্যাল ক্যান্সার নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন সারাবাংলাকে বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সারের জন্য নারীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
তিনি বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সারের লক্ষণ সবাইকে জানতে হবে। লক্ষণ দেখা গেলেই রোগ নির্ণয়ের জন্য স্ক্রিনিং করাতে হবে, এখানে সংকোচের কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার শরীরের আর দশটি অসুখের মতো একটি অসুখ। অন্য কোনো অসুখ নিয়ে যদি আমাদের সংকোচে না হয় তাহলে এসব রোগ নিয়েও সংকোচের কিছু নেই। এসব রোগের চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যেতে থাকে।
জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কোনো উপসর্গ নেই বলে এর চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়ে যায়। তবে উন্নত বিশ্বে নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। আমাদের দেশে সেই সচেতনতা এখনো গড়ে ওঠেনি- বলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির মহাসচিব ডা. এস এম আব্দুর রহমান।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আক্রান্ত হওয়ার আগে অথবা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলেও জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে শতভাগ। শনাক্ত এবং চিকিৎসা শুরু হতে যত দেরি হতে থাকে, নিরাময়ের সম্ভাবনা ততোই কমতে থাকে। তাই সব ধরনের সংকোচের বাইরে গিয়ে অন্যান্য অসুখের মতোই স্বাভাবিক একটি অসুখ ধরে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সচেতন হতে হবে।
সারাবাংলা/এটি