Saturday 18 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছিনতাইয়ের টাকায় কল্যাণ ফান্ড!


১৮ আগস্ট ২০১৮ ১৫:২৫

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেট ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একইসঙ্গে তাদের কাছ থেকে আট লাখ টাকাও জব্দ করা হয়েছে। এই চক্রটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিভিন্ন সময় মামলা চালানোর খরচ জোগাতে ছিনতাই করা টাকার একাংশ দিয়ে ‘কল্যাণ ফান্ড’ও গঠন করেছে ছিনতাইকারীরা।

শনিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এ সময় জানানো হয়, গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীরা হলেন— সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সাগর, আলী হাসান, সবুজ বিশ্বাস, মো. রকি ওরফে নুরজ্জামান, মুক্তা বেগম, বেবি আক্তার, নুপুর ওরফে ঝুমুর ও লিটন মিয়া।

পুলিশেল অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ছিনতাইকারীদের একটি কমন বা কল্যাণ ফান্ড রয়েছে। পুরুষ ছিনতাইকারীদের অনেকেই এর আগে পাঁচ-ছয় বার করে জেলে গেছেন। নারীরাও এর আগে দুইবার জেলে গিয়েছিলেন। তাদের মামলা চালানোর খরচ কমন ফান্ড থেকেই খরচ করা হয়। কল্যাণ ফান্ড সম্পর্কে ছিনতাইকারী নুপুর জানিয়েছেন, সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রীর কাছে কল্যাণ ফান্ডের আট লাখ টাকা আছে। প্রতিমাসের ছিনতাই করা টাকা থেকে একটা অংশ ওই ফান্ডে রাখা হয়। সেই টাকা দিয়ে সবার মামলা চালানো হয়।

আবদুল বাতেন আরও বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন যে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করত, তার একটি মাসিক লিস্ট পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কোনো মাসে পাঁচ লাখ, কোনো মাসে ছয় লাখ, কোনো মাসে চার লাখ, আবার কোনো মাসে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ব্রিফিংয়ে বলেন, মার্কেটগুলোতে ভিড়ের সময় অমনোযোগী থাকা অবস্থায় ব্যাগসহ মোবাইল নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। অনেক সময় নারী ছিনতাইকারীরা ভালোভাবে সেজেগুজে মার্কেটগুলোতে যান। সেখান থেকে টার্গেট করে পরে রাস্তায় ছিনতাই করেন। দ্রুত ও নিরাপদে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার জন্য তারা একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করতেন।’ মাইক্রোবাসটিও ছিনতাইয়ের টাকায় কেনা বলে জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী ও নিউমার্কেট এলাকা থেকে ৯টি মোবাইল ছিনতাই করতে বেবি আক্তার নামে চক্রের একজন সদস্যের মাত্র চার ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন। চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান আবদুল বাতেন। এ জন্য গ্রেফতার হওয়া সবার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগ শাহবাগ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬১ হাজার ১৫০ পিস ইয়াবাসহ ছয় জন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন— নাসিফ ইকবাল ওরফে তপু, আব্দুল আজিজ, বিল্লাল হোসেন, মো. মিলন, মো. আসিফ ও নাসিমা আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, তপুর কাছ থেকে ৬০ হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে। নাসিমা আক্তার স্পর্শকাতর স্থানে ইয়াবা বহন করে বিভিন্ন জনের কাছে পৌঁছে দিত।

একইসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ রাজধানীর লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৫ লাখ টাকার জাল নোটসহ আরও আট জনকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানান আবদুল বাতেন। এ সময় কালি, কাগজ, প্রিন্টার ও জাল টাকা ছাপানোর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। এরা হলেন— কাউসার হামিদ, আলাউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, মোস্তফা, সোহেল, মজিবর রহমান বাদশা, সজিব হোসেন ও সালেহা বেগম।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, কাউসার হামিদ ২০০৪ সাল থেকে এই প্রতরণায় জড়িত। এর আগে কয়েকবার জেল খেটেছেন। জেল থেকে বের হয়ে ফের একই কাজ করেন। প্রতি এক লাখ টাকা ছাপাতে তার খরচ হতো ১০ হাজার টাকা। বিভিন্ন এজেন্ডদের কাছে সেই টাকা বিক্রি হতো ১৫ হাজার টাকায়। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব এজেন্টরা ৩ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা করে বাজারে ছড়িয়ে দিতো।

পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে এরই মধ্যে তারা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বাজারে ছেড়েছে। গরুর হাটকে কেন্দ্র করে এই টাকা চালানো হবে বলে তথ্য দিয়েছে। তবে তারা সুবিধা করতে পারবে না। কারণ প্রতিটি গরুর হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের মেশিন ও যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা বা বিক্রেতারা এখন সজাগ থাকলেই হয়।

আরও পড়ুন-

ঈদ নিরাপত্তা : র‌্যাবের ফেসবুক পেজে মিলবে যানজটের খবর

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর