জাতীয় নির্বাচন : প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে ইসি
১৯ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৫২
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে তাদের প্রস্তুতি প্রায় ৮০ ভাগ শেষ। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শতভাগ প্রস্তুতি শেষ হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তও নিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিলের পর ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণ করা হবে। এটা ধরে নিয়েই কমিশন কাজ করছে। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ৮০ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সম্প্রতি বলেছেন, নভেম্বরের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ডিসেম্ভরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, কমিশন সভায় তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত ও সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করে কেন্দ্র বাছাইয়ের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ। অন্যদিকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮ কোটি ১০ লাখ এবং ৯ কোটি ১৯ লাখ।
একাদশ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র
আগামী সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার এবং ভোটকক্ষ থাকবে প্রায় ২ লাখ। এর মধ্যে সমতলীয় এলাকায় কেন্দ্র থাকবে ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ভোটকেন্দ্র থাকবে ৬১৩টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে মোট ভোটার থাকবে আড়াই হাজার। আর গড়ে ৬০০ পুরুষ ও ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোট কক্ষ রাখা হবে।
অন্যদিকে, নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি, ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি। দশম সংসদে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ছিল যথাক্রমে ৩৭ হাজার ৭০৭টি এবং ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে মোট ৬ লাখ জনবলের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
আরপিও সংশোধন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) আর নতুন কোনো সংশোধনী আসছে না। তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এটি আরপিওতে সংযোজন হবে কিনা, সে বিষয়টিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩৪ লাখ ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ৬ লাখ ১৯ হাজার স্ট্যাম্প প্যাড, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ১৭ হাজার ৪২০ কিলোগ্রাম লাল গালা, ৫ লাখ ৭৮ হাজার অফিসিয়াল সিল, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ৮৭ হাজার ১০০ ব্রাশ সিল, ৬ লাখ ৬৫ হাজার অমোচনীয় কালির কলম ও ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ কেনা হচ্ছে। এসব প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন ইসির ক্রয় কমিটির প্রধান খোন্দকার মিজানুর রহমান।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ শেষ হয়েছে ইসি। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৫ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকি ২৭৫ আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন
বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে নিবন্ধন পেতে ৭৬টি রাজনৈতিক দল আবেদন করে। কমিশন এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়ার মতো কোনো যোগ্য দল পায়নি। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাচ্ছে না। ফলে বিদ্যামান ৩৯টি নিবন্ধিত দল আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
নির্বাচনী বাজেট
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য খরচ বাবদ ছয়শ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আগে, দশম সংসদ নির্বাচনে খরচ হয়েছিল আড়াইশ কোটি টাকা। তবে তখন ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ায় খরচ কম হয়েছিল। এবার পুরো ৩০০ আসনের নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবে ছয়শ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংসদের মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর