Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লবণের দাম বাড়ছে, ‘কৃত্রিম সংকটে’র আশঙ্কা চামড়া ব্যবসায়ীদের


১৯ আগস্ট ২০১৮ ০৯:৪২

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঈদুল আজহা এলেই নিয়ম করে বাড়ে লবণের দাম। কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে বাড়তি চাহিদা থাকায় শেষ মুহূর্তে লবণের ‘সংকট’ও দেখা দেয়। সেই নিয়ম মেনেই যেন গত একমাসে লবণের দাম বেড়েছে বস্তায় অন্তত একশ টাকা। যদিও লবণ মালিক সমিতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছে, কোরবানিকে সামনে রেখে দেশে লবণের কোনো সংকট হবে না। এমন বক্তব্যে অবশ্য ভরসা পাচ্ছেন না কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করে শেষ মুহূর্তে লবণের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন মিলাররা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, প্রতি বস্তা লবণ বর্তমানে আটশ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেকের ব্যবধানে এই লবণের দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে অন্তত একশ টাকা। এ বিষয়ে লবণ মিল মালিক সমিতির বক্তব্য, প্রতিবছরই কোরবানির অজুহাতে একটি শ্রেণি দেশে লবণ আমদানি করতে চায়। তারা নিজেদের স্বার্থে লবণের দাম বেড়ে গেল বলে হুলস্থুল ফেলে দেয়। যদিও ঢাকায় এক বস্তা লবণের দাম খরচসহ কোনোভাবেই ৯শ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলে সারাবাংলাকে জানান বাংলাদেশ লবণ মিল সমিতির সভাপতি নুরুল কবির।

তিনি বলেন, ‘কোরবানিকে সামনে রেখে লবণ সিন্ডিকেটের সদস্য ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর লবণের বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোরবানির জন্য কোনো লবণের সংকট নেই।’ তিনি জানান, মিল গেটে চামড়ায় ব্যবহারের উপযোগী লবণ প্রকারভেদে ১০ টাকা সাড়ে ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৭৫ কেজি ওজনের লবণের বস্তার দাম পড়ছে সাড়ে সাতশ থেকে আটশ টাকা।

তবে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি  মো. হাজী দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংকট না থাকলেও শেষ মুহূর্তে গিয়ে লবণের দাম বাড়ে। কাল-পরশু বলা যাবে লবণের দামটা আসলে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকালও এক বস্তা লবণ ছিল হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল নয়শ টাকা।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। আর উৎপাদন হয় ১৫ লাখ টনের মতো। ঘাটতি বিবেচনায় গত বছর ৫ লাখ টন লবণ আমদানির সুযোগ দিয়েছিল সরকার। ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আমদানির পাশাপাশি প্রতিবছরই ৪ থেকে ৫ লাখ টন লবণ অবৈধভাবে দেশে আসে। বাংলাদেশ লবণ মিল সমিতির সভাপতি নুরুল কবিরও সারাবাংলাকে বললেন, সোডিয়াম সালফেট ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সল্টের নামে প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন লবণ আমদানি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর বলে জানান তিনি।

লবণ মালিক সমিতি জানিয়েছে, দেশে ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় লবণের উৎপাদন কম হয়েছে। আবার মহেশখালী-মাতারবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও অন্যান্য শিল্প গড়ে ওঠার কারণে লবণ উৎপাদনের জমিও সংকুচিত হয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও চলতি মৌসুমে পরিশোধনযোগ্য ১৫ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। সারাবছরের চাহিদার তুলনায় এরপরও ১ লাখ ২৮ হাজার টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। সেই অনুযায়ী দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সুপারিশও করেছে বিসিক।

এদিকে, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ। আর সোয়া কোটি  চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলছে, বড় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১২ কেজি, মাঝারি চামড়ায় ৭ থেকে ৮ কেজি ও ছোট চামড়ায় ৫ থেকে ৬ কেজি লবণ লাগে। সেই হিসাবে এবার কোরবানিতে এক থেকে দেড় লাখ টনের মতো লবণ লাগতে পারে বলে মনে করছেন লবণ মিল সমিতির সভাপতি নুরুল কবির। তবে, নির্ধারিত চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে বছরটিতে ঠিক কী পরিমাণ লবণ প্রয়োজন— তা জানাতে পারেননি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

লবণ সংকট বা দাম বেড়ে যাওয়া বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ লবণ মিল সমিতির সভাপতি নুরুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘বছরের সার্বিক চাহিদায় লবণের কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরে লবণের সংকট নেই। ট্যানারি শিল্প সংশ্লিষ্টদের বলেছি, আপনাদের কতটুকু লবণ লাগবে, কোথায় কয় বস্তা— আমাদের বললে আমি মিলারদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবো।’ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে নুরুল কবির বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে লবণের দাম সাতশ থেকে আটশ টাকার মধ্যেই আছে। কিন্তু বস্তার দাম কখনওই ১৪শ টাকায় ওঠেনি।’

প্রকৃতপক্ষে লবণের সংকট থাকে না বলে জানান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি  মো. হাজী দেলোয়ার হোসেনও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই কোরবানির সময় প্রতি বস্তা লবণে দুইশ থেকে তিনশ টাকা বেশি দিতে হয়। দাম দিলেই যেহেতু পাওয়া যায়, সেহেতু সংকট আছে— সেটা কিন্তু বলা যাবে না। তাই লবণের কারণে চামড়া সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে লবণ ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার লোভ না করলে আমাদেরও বাড়তি টাকা খরচ করতে হতো না।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

চামড়া লবণের দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর