কখন আসবে ট্রেন, স্টেশনে বাড়ছে ঘরমুখী মানুষের অপেক্ষা
২০ আগস্ট ২০১৮ ১৬:৪৫
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর যাওয়ার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি চলছিলো আবুল কাশেমের পরিবারে। বিশেষ করে ছোটো দুই ছেলে-মেয়ে অনেকদিন পর দাদা বাড়ি যাওয়ার আনন্দে গতরাতেও প্রায় নির্ঘুম ছিল। আর এখন তাদের সময় কাটছে অপেক্ষায়। ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে তারা চেয়ে আছে উত্তরের দিকে। কখন ট্রেন আসবে। কখন উঠবে, আর কখন যাবে গ্রামের বাড়ি। ট্রেন আসে না। তাই তাদের মনও বসছে না কিছুতেই।
সকাল পৌনে নয়টার নীলসাগর প্ল্যাটফর্মে আসতে সাড়ে ১১টা বাজিয়েছে। ততক্ষণে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় বগুড়ার মারিয়ামের। এতক্ষণ বসে থেকে ক্লান্ত শরীর, কি করে ট্রেনে উঠার যুদ্ধে নামবে সেটা ভাবারও সময় নেই। বললেন, ‘ভাই ট্রেন চলে আসছে, এখন উঠতে পারলে হয়।’ সঙ্গীদের সঙ্গে ব্যাগ-বোঁচকা টেনে ট্রেনের দিকে ছুটতে থাকেন তিনি। একসময় ঠেলাধাক্কা খেয়ে উঠেও যান ট্রেনে।
লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী যুবায়ের হোসেন বলেন, ‘১০টার ট্রেন দুপুর ১২টায়ও আসেনি। কখন আসবে সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই। জানি না কখন বাড়ি যাব। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে না আসা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না।’
ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিন সোমবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছিলো এমন হতাশ যাত্রীতে ঠাসা। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। ঢাকা থেকে সবগুলো রুটেই ট্রেনের শিডিউল বিঘ্ন ঘটেছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের ট্রেনের শিডিউলে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু বলেন, ‘ঈদের দুইদিন আগে এমন চাপ হয়। এবার অন্যবারের তুলনায় ট্রেনে যাত্রীর চাপও বেশি। সবমিলে ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভোগান্তি হচ্ছে, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু স্বাভাবিক রাখা যায়।’
গত দুদিনের মত সোমবারও ট্রেনের ছাদ ভর্তি মানুষ দেখা গেছে। নিরাপত্তাকর্মীরা এসব যাত্রীদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়েই তারা ছাদে যাত্রা করছেন। এরমধ্যে নারী ও শিশু যাত্রী রয়েছেন।
স্টেশন সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল বাদে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। রেলের প্রস্তুতির পরও সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সকাল থেকে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা বিকালের দিকে আরো বাড়বে। কেননা রাতের চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা বেশি। অনেকে দিনে কাজকর্ম শেষে রাতের ট্রেন ধরবেন।’
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার কোরবানির ঈদের চার দিন আগে থেকে ঈদের সাত দিন পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুটি করে, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটে এসব ট্রেন চলবে। এ ছাড়া ভৈরব-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে ঈদের দিন চলবে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’।
পুরো কমলাপুর ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ছয়টায় রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৮টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি স্টেশনে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিলম্ব করে ৯টা ২৫ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
একই অবস্থা রংপুর এক্সপ্রেস সকাল নয়টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই ট্রেন এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি। যদিও স্টেশনের বড় স্ক্রিনে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া ছিলো ১১টা ৪৫ মিনিট।
অন্যদিকে, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে আটটায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৯টা ১০ মিনিটেও ছেড়ে যায়নি। ঈদ স্পেশাল লালমনি এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সঠিক সময়ে কমলাপুরে এসে পৌঁছাতে পারেনি।
সারাবাংলা/এমএস/এমও