Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অদক্ষতায় বছরে নষ্ট হয় ৫শ কোটি টাকার চামড়া


২১ আগস্ট ২০১৮ ০৯:১২

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গবাদিপশু জবাইয়ের পর অপরিকল্পিত ও অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে চামড়া ছাড়ানো এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বছরে পাঁচশ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু কোবানির সময়ই নষ্ট হয় প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার চামড়া। বছরের অন্য সময়ের নষ্ট হয় আরও দেড়শ কোটি টাকার চামড়া। মূলত চামড়া ছাড়ানোর সময় সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার না করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিমাণমতো লবণ ব্যবহার না করায় বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, সঠিকভাবে পশুর চামড়া না ছাড়ানোর কারণে শুধু কোরবানির সময়েই তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়। সঠিকভাবে পশুর চামড়া ছাড়ানো গেলে এবং সময়মতো লবণ ব্যবহার করলে এটি রোধ করা সম্ভব।

এ ছাড়াও বছরের অনান্য সময়ে আরও এক থেকে দেড়শ কোটি টাকার মতো চামড়া নষ্ট হয় মূলত সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে। তিনি বলেন, এগুলো রোধ করতে পারলে বছরে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব।

বিটিএ সভাপতি বলেন, কোরবানির সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিজেরাই নিজেদের গরু চামড়া ছাড়ায়। এসব লোকজনের অভিজ্ঞতা না থাকায়, চামড়া ছাড়াতে গিয়ে তা কেটে ফেলে, আবার সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া না ছাড়ানোর কারণে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, চামড়া ছাড়ানো পর তা সংরক্ষণ এবং গুণগত মান বজায় রাখতে লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সময়মতো পরিমাণমতো লবণ ব্যবহার করলে চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, চামড়া ছাড়ানোর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে পরিমাণমতো লবণ মাখানো হলে চামড়া নষ্ট হবে না।

বিজ্ঞাপন

এ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কোরবানির চামড়া ছাড়ানোর বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বনের আহবান জানিয়েছে। সম্পতি দেশের সব মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে এসএমএস দিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খোদ বাণিজ্যমন্ত্রলায়ের তথ্য অনুযায়ী কোরবানির সময় সারাদেশে ৩৩০ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়। এতে আরও বলা হয় মান সম্পন্ন ছুরি ও সঠিক নিয়ম মেনে চামড়া ছাড়ানো হলে এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, বছরে সবচেয়ে বেশি চামড়া নষ্ট হয় কোরবানির ঈদের মৌসুমে। বছরের মোট চামড়ার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এই সময়ে সংগ্রহ করা হয়। কোরবানির সময়ে সাধারণত অনভিজ্ঞ লোকজন পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজটি করেন। এতে করে অনেক চামড়া কেটে যায় কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। এই সময়ে চামড়া নষ্ট হওয়ার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে তিনশ কোটি টাকারও বেশি। তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণমাধ্যমে কোরবানির আগে ব্যাপক বিজ্ঞাপন ও নাটিকা প্রচার করা দরকার। যাতে করে চামড়া ছাড়ানোর পদ্ধতিটি সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারেন।

চামড়া নষ্ট হওয়া কমিয়ে আনতে করণীয়: চামড়ার গুণগত মান রজায় রাখতে ট্যানারি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সে সঙ্গে সারাদেশে দক্ষ শ্রমিকদেও সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কোরবানীর মৌসুমে অপেশাদার লোকজনকে চামড়া ছাড়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই জন্য গণমাধ্যমে বিশেষ করে রেডিও টিভিতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ও নাটিকা প্রচারের মাধ্যমে চামড়া ছাড়ানো পদ্ধতি সর্ম্পকে অবহিত করতে হবে। সে জন্য মেশিনের মাধ্যমে চামড়া ছাড়ানোর বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।

চামড়া নষ্ট হওয়ার আরও কিছু কারণ: চামড়া ছাড়ানোর পর পরিবহনে দীর্ঘসূত্রিতা, অতি মুনাফার প্রবণতায় সঠিক মাত্রার চেয়ে কম লবণ ব্যবহার করা। সঠিক তাপমাত্রায় তামড়া সংরক্ষণ না করা। গরুর চামড়ার ৩৫ শতাংশ এবং অনান্য পশুর চামড়ার ৪০ শতাংশ বিশুদ্ধ লবণ ব্যবহার না করা। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের রফতানি আয়ের এখনো ৯ শতাংশ আসে চামড়া শিল্প থেকে। চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে সর্বত্র সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার না করায় বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হচ্ছে।

উল্লেখ্য এবারের কোরবানির ঈদে ১ কোটি ১৫ লাখ পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পশু থেকে চলতি বছরে ৩৩ কোটি বর্গফুট চামড়া সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি বর্গফুট। বাকি ১৩ কোটি বর্গফুট চামড়া বছরজুড়ে সংগ্রহ করা হবে। এর আগে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ কোটি ৫০ লাখ বর্গফুট, ৩০ কোটি বর্গফুট এবং ৩১ কোটি ৫০ লাখ বর্গফুট।

আরও পড়ুন-

পাননি পাওনা ২০ কোটি, অনিশ্চয়তায় নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা

সারাবাংলা/জিএস/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর