Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিডিউল বিপর্যয় আর জনস্রোতে কমলাপুরে নাভিশ্বাস


২১ আগস্ট ২০১৮ ১১:২৪

।। আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একদিন পরই ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে তাই এ সপ্তাহের শুরু থেকেই রাজধানী থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নেমেছে মহাসড়কে। বাসের পাশাপাশি লঞ্চ আর ট্রেনে চড়েও চলছে ঈদযাত্রা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈদযাত্রার আনন্দঘন সময় পরিণত হয়েছে ভোগান্তিতে। শুরুর দিকে ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকলেও শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে পারছে না ট্রেনগুলো। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলো কোনোভাবেই শিডিউল মেনে চলতে পারছে না। সেইসঙ্গে শেষ সময়ে বাড়ির পথে রওনা দেওয়া হাজারও মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১  আগস্ট) ঈদযাত্রার শেষ দিনের সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, এখনও ঘরমুখী মানুষের ভিড় অনেক বেশি। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মই মানুষের আনাগোনায় কানায় কানায় পূর্ণ। বিশেষ করে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন ছেড়ে যেতে পারছে না বলে মানুষের ভিড়ও কমছে না কমলাপুরে। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের দেরি করার সময়ও বাড়তে থাকে।

সকাল ১০টার দিকে কথা হয় উত্তরবঙ্গগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী স্বপনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৬টায়। কিন্তু এখনও ট্রেনের খোঁজ নেই। স্টেশন থেকে বলা হয়েছে ১১টার দিকে ট্রেন ছাড়তে পারে। কিন্তু সেটাও নিশ্চিত নয়।’

দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করা স্বপনের চোখেমুখেও অপেক্ষার সেই ক্লান্তি যেন স্পষ্ট। তার সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের অবস্থাও তথৈবচ।

স্বপন আরও বলেন, ‘ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেলে ভালো লাগতো। এভাবে পরিবার নিয়ে বসে থাকাটা খুব কষ্টের। খারাপই লাগছে।’ তবে শেষ পর্যন্ত সুস্থভাবে বাড়ি যেতে পারলে এসব ক্লান্তি তুচ্ছ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পাশেই থাকা আরেক ট্রেনের যাত্রী কামরুল বললেন, ‘এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করাটা খুব কষ্টের। তার ওপর এখন দুয়েকটা ট্রেনের যাত্রী নয়, চার-পাঁচটা ট্রেনের যাত্রীকে একসঙ্গে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে কষ্ট আরও বেড়েছে।’

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী সাগর আহমেদ বলেন, ‘সকালে ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু ছাড়ছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর। কিন্তু আমরা সাবধানতা হিসেবে নির্ধারিত সময়েরও প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে স্টেশনে চলে এসেছি। তাতে করে আমাদের অপেক্ষা আরও বেড়ে গেছে।’

দীর্ঘ এই ভোগান্তির পরও একটি করে ট্রেন এলেই যখন যাত্রীরা উঠে বসছেন, তখন যেন তাদের মুখে স্বস্তির ছাপ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে পারছেন, এটাই যেন সব ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে দিচ্ছে। বাড়ি ফেরার আনন্দের কাছে এসব ভোগান্তি তুচ্ছ হয়ে যায়।

এদিকে, একটি ট্রেন এসে প্ল্যাটফর্মে ভিড়তেই সেদিকে ছুটে যেতে দেখা গেল ওই ট্রেনের যাত্রীদের। দেখতে দেখতে ট্রেন ভর্তি হয়ে গেল যাত্রীতে। কেবল সিটই নয়, প্রতিটি বগির ভেতরেই দাঁড়িয়ে থাকার জায়গাও যেন নেই। বগির গেটে, ইঞ্জিনের পাশে, সব জায়গায় কেবল মানুষ আর মানুষ। শুধু তাই নয়, জীবনের ঝুঁকি থাকলেও ট্রেনের ছাদেও উঠেছেন অনেক মানুষ। বলতে গেলে গোটা ট্রেনেই যেন তিলধারণের জায়গা নেই। যেভাবেই হোক না কেন, বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই যেন মরিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের একজন টিটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বললেন, ছাদে চড়ে যাওয়া তো নিষেধ। আমরা বললেও কেউ কথা শোনে না। অনেকেই টিকেট না কেটেও ছাদে চড়েছে। কেউ আবার টিকেট কেটে বগিতে উঠতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে ছাদে গিয়ে উঠেছ।

এদিকে, অন্য দিনের মতো আজও লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনছেন অনেকেই। কোনো সিট পাওয়া যাবে না জেনেও স্ট্যান্ডিং টিকেট কিনেই ছুটছেন প্ল্যাটফর্মের দিকে। বাড়ি তো যেতে হবে!

স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ভোরের দিকে বেশকিছু ট্রেন ‘মোটামুটি’ সময়মতো ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ছিল বলাকা, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, মহানগর প্রভাতী, তিস্তা, কর্ণফুলী। এসব ট্রেনের কোনোটা নির্ধারিত সময়ে, কোনোটা ১৫-২০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে।

তবে অনেকগুলো ট্রেনই পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। এর মধ্যে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার ছাড়ার কথা থাকলে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভব্য সময় জানানো হয়েছে সকাল ১১টায়। অন্যদিকে, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে সাড়ে ৯টার পর। অন্যদিকে, নীল সাগর এক্সপ্রেস ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এর সম্ভাব্য সময় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট।

জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকালে ট্রেনের শিডিউল ঠিক ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে। কিন্তু কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে না পৌঁছানোর কারণে এখনও ছেড়ে যেতে পারেনি।’ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেন চলাচলের গতি ধীর হওয়ার কারণেই এমন শিডিউল বিপর্যয় বলে মনে করছেন তিনি।

এ বিষয়ে কমলাপুরের রেল স্টেশনের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সারাবাংলা/এআই/টিআর

ঈদযাত্রা কমলাপুর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর