Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের ছুটিতে যেতে পারেন মৌলভীবাজার


২১ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৩০

।। হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

মৌলভীবাজার: ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে পারেন পর্যটন রাজধানী চায়ের দেশখ্যাত মৌলভীবাজারে। হোটেল মালিক রেস্টুরেন্ট মালিক এবং ট্যুর গাইডরা আশা করছেন আসন্ন এই ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর পরিমাণে পর্যটকের ঢল নামবে এই জেলায়।

বিভিন্ন হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন তাদের বুকিং শেষ পর্যায়ে। অনেকে আগাম বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকরা। তাই হোটেল মোটেল গেস্ট হাউসগুলোতেও বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন বাতি দিয়ে সাঁজানো হয়েছে হোটেলগুলোকে।

শ্রীমঙ্গল চৌমোহনায় অবস্থিত হোটেল স্কাই-পার্ক’র মালিক ইকরামুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এবার প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসবে শ্রীমঙ্গলে। শুধু আমার হোটেলই নয় শ্রীমঙ্গলের বেশিরভাগ হোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সেবা দিতে আমরা হোটেল মালিকরা প্রস্তুত রয়েছি।

মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার শাহ-জালাল সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বরাবরের মতোই আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্নভাবে কাজ করবে প্রশাসন। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কাজ।

ট্যুর গাইড সাজু খাসিয়া জানান, এরইমধ্যে আমার হাতে অনেক বুকিং কিছু বুকিং আমি অন্যান্য ট্যুর গাইডদের দিয়ে দিয়েছি। তবে আমার হাতে যতগুলো বুকিং রয়েছে তাদের বেশিরভাগই এবার হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছে।

লাউয়াছড়া প্রবেশ কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত রয়েছি, প্রচুরপরিমাণ পর্যটক এই ঈদে আসবে বলে আশা করছি। তবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সবধরনের সেবা এবং নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

এবারের এই ঈদের বরাবরের মতোই পর্যটকের ঢল নামবে এবং তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এই ছুটিতে ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবেন মৌলভীবাজার এবং শ্রীমঙ্গলে। এসব পর্যটকদেরও বরণ করতে প্রস্তুত দশর্নীয় স্থানগুলো।

চা বাগান: চা বাগান মানেই সবুজের অবারিত সৌন্দর্য। পুরো মৌলভীবাজার জেলা ঘিরে রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল নাম শুনলেই প্রথমেই মনে হবে চা বাগানের কথা। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যে কোন সড়ক ধরে হাঁটাপথ দুরত্বে পৌঁছা মাত্র চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল পাহাড় ঘেরা চা বাগান। সবুজের মেলা চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অতি অবশ্যই বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: লাউয়াছড়া বন যা এক কথায় অনবদ্য। রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর বৃক্ষাদি। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১০ কি. মি. আর ঢাকা থেকে ১৯৬ কি. মি.। এর আয়তন ১২৫০ হেক্টর। মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত, চায়না, মায়ানমার এবং বাংলাদেশসহ ৪টি দেশে ওদের প্রজাতি সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেঁষা রয়েছে ৩টি আদিবাসী পল্লী। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।

বিটিআরআই: বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান। দেশের চা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরআই কমপ্লেক্স-এর সামনে অপরূপ ফুলকুঞ্জ, শত বছরের চা গাছ, চা পরীক্ষাগার, চারদিকে চা বাগান, চা নার্সারি, চা ফ্যাক্টরি, অফিসার্স ক্লাব ভবনের পেছনে অবস্থিত চোখ ধাঁধানো লেক, রোবাস্টা কফি গাছ, নানা জাতের অর্কিডসহ ভেষজ বাগান আপনার মনকে চাঙ্গা করবেই।

বিজ্ঞাপন

বধ্যভূমি ৭১: শ্রীমঙ্গলের ‘বধ্যভূমি ৭১’ আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিতে ২০১০ সালে স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণের পর দর্শনার্থীরা এখানে উপচে পড়ে। এছাড়াও প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসেন বধ্যভূমি দেখতে।

মাধবপুর লেক: সুনীল আকাশ, ঘাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে হারিয়ে যান আপন মনে। চারিদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলে। আস্তে আস্তে যতই সামনের দিকে এগুতে থাকবেন ততই ভাল লাগবে। মাঝে মাঝে বানর ও হনুমানের লাফালাফির দৃশ্যও চোখে পড়ে। মাধবপুর লেকে গিয়ে পৌঁছতেই সবুজ পাতার গন্ধ যে কারো মনকে চাঙ্গা করে তুলবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত মাধবপুর লেক দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান।

ডিনস্টন সিমেট্রি: শ্রীমঙ্গলে আর্কশনীয় একটি স্থান হচ্ছে শতবছর পুরানো ডিনস্টন সিমেট্রি। এ সিমেট্রি দেখতে প্রচুর পর্যটক আসে এখানে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিঃমিঃ দূরে রাজঘাট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত খেজুরীছড়ায় ফিনলে টি কোম্পানির চা বাগানে এটি অবস্থিত। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশরা শ্রীমঙ্গলে এসে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ আরম্ভ করে। এখানে কাজ করতে এসে বিভিন্ন সময় যেসব ব্রিটিশ নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন তাদের সমাহিত করা হয় খেজুরীছড়ার এই ডিনস্টন সিমেট্রিতে।

মনিপুরী পল্লী: যদিও সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব, কাঁচামালের দুষ্পাপ্যতা ইত্যাদি কারনে মনিপুরী তাঁত শিল্প অনেকটা ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে, তারপরও অনেক মনিপুরী পরিবার সযত্নে শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছে। শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায় এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে বেশ কটি তাঁতে তৈরী হচ্ছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্য। তাঁত শিল্প সম্পর্কে জানতে এবং তাঁতে কাপড় বুনার প্রক্রিয়া দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায়।

হাম হাম জলপ্রপাত: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাতে পর্যটকের ঢল নেমেছে গহিন অরণ্যের এই জলপ্রপাতটি দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভীড় করেন। মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জল প্রপাতের চেয়ে তিনগুণ বড় হামহাম জল প্রপাতটি।কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্তে গহিন অরণ্যের হামহাম জলপ্রপাতটির সংবাদ সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ১৬০ ফুট উচ্চতা থেকে প্রবাহিত হামহাম জলপ্রপাত। এই জল প্রপাতে যাওয়ার কোন রাস্তা না থাকলেও পর্যটকরা দুর্গম পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সংগ্রাম করে এক নজর হামহাম দেখতে ছুটছেন। মা

নীলকণ্ঠ চা কেবিন: একই গ্লাসে সাত স্তরে সাত রঙের চায়ের কথা অনেকেরেই জানা। এ চা জিভে জলের বদলে বিস্ময় জাগায় বেশি। শৈল্পিক ও আকর্ষণীয় এ চায়ের নামডাক অনেক আগেই বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। শ্রীমঙ্গলে যারা বেড়াতে আসেন তারা সাত রঙা চায়ের স্বাদ নিতে ভুলেন না। রমেশ রাম গৌড় (৪২) প্রায় ১২ বছর ধরে সপ্তবর্ণের এ চা বানিয়ে যাচ্ছেন।

নির্মাই শিববাড়ী: শ্রীমঙ্গলের ঐতিয্যবাহী নির্মাই শিববাড়ি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আর্কশনীয় স্থান।এখানে শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৯ একর জায়গা নিয়ে বিশাল দিঘী। দিঘীল চারপাশে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। চর্তুদশ শতাব্দীতে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা অঞ্চলে ত্রিপুরার মহারাজা রাজত্ব করতেন।

বাইক্কা বিল: হাইল হাওরে অবস্থিত সংরতি মৎস্য অভয়াশ্রম ‘বাইক্কা বিল’। ইউএস আইডি’র র অর্থায়নে মাচ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও পাখির অভয়াশ্রম। অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ বিল এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। নয়নাভিরাম জলাভূমিতে হাজারও শাপলা আর পদ্মফুল ফোটে। বিলের পানির উপর ঘুরে বেড়ায় ফড়িং। সকাল বিকেল চলে রঙিন ফড়িংয়ের বিরতিহীন শোভাযাত্রা। বৃষ্টিহীন উষ্ণ দিনে বিলে ফুলের পাশে আসে রঙিন প্রজাপতির দল। জীববৈচিত্র ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর বাইক্কা বিল জলজ সম্পদের অমূল্য ভাণ্ডার।

চা কন্যার ভাস্কর্য: দেশের বিক্ষাত পর্যটন নগরী হচ্ছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। সুনীল আকাশ আর সবুজের সমারোহ আর অপরূপ সৌন্দর্য শোভিত চা শিল্পাঞ্চলের বিশাল গৌরব ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে শ্রীমঙ্গলে নির্মিত হয়েছে চা-কন্যা ভাস্কর্য। চা-শিল্পাঞ্চলের দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে এই ভাস্কর্যটিতে। চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে স্থাপিত এক নারী চা শধমিকের চা-পাতা উত্তোলনের দৃশ্য সংবলিত ‘চায়ের দেশে স্বাগতম’ শিরোনামের এ ভাস্কর্যটি দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীসহ সবার দৃষ্টি কেড়েছে।

খাসিয়া পানপুঞ্জি : আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায় দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় উঁচু পাহাড়ি টিলা পরিস্কার করে পান চাষ করে থাকে আর এসব পান চাষ এলাকাই পুঞ্জি নামে পরিচিত। প্রতিটি পানপুঞ্জিতে ২৫/৩০টি পরিবার গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করে। খাসিয়ারা পাহাড়ি পতিত ভূমিতে সুউচ্চ গাছের পাশে লতানো পানের চারা রোপন করে। রোপনকৃত এ চারা অল্পদিনেই বড় গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায়। টিলার পর টিলা সুউচ্চ গাছগুলো সবুজ পান পাতায় ঢেকে থাকে আর বড় গাছে লতানো পান গাছের এই দৃশ্য অত্যন্ত নয়নাভিরাম। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা বাঁশের তৈরি এক প্রকার মই ব্যবহার করে গাছ থেকে পান সংগ্রহ করে। সে পান খাসিয়া নারীরা গুছিয়ে খাচায় ভরে। এই দৃশ্য দেখতে চাইলে চলে যান নাহার, নিরালা, চলিতাছড়া, লাউয়াছড়া প্রভৃতি পান পুঞ্জিতে।

সারাবাংলা/একে

পর্যটন মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর