Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্যটক বরণে প্রস্তুত দিনাজপুরের রাম সাগর


২২ আগস্ট ২০১৮ ১৫:৫৭

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

দিনাজপুর: চারপাশ ঘিরে মাটির তৈরি উঁচু উঁচু টিলার ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মাঝে মাঝে দুলছে সবুজ লতাপাতা। বিশাল এলাকাজুড়ে কেবল সবুজেরই সমারোহ। আর এর মধ্যেই একবুক নীল জল নিয়ে স্থির এক দীঘি। তার পার ঘিরে বাহারি সুগন্ধি ফুলের গাছ। নীল-সবুজের রঙে এখানে প্রকৃতি রঙিন, পরিপাটি। যেন দূর থেকেও আহ্বান জানায় মানুষকে।

বলছিলাম রাম সাগরের কথা। দিনাজপুরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কোলজুড়ে সৌন্দর্যের পসরা সাজানো এই দীঘি দিনের পর দিন চোখ জুড়িয়ে আসছে মানুষের। সারাবছরই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও ঈদের মতো একটু বেশি ছুটির দিনগুলোতে এখানে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তেমন ভিড় শুরু হয়েছে ঈদুল আজহাকে ঘিরেও। ঈদ পরবর্তী দিনগুলোতেও পর্যটকদের বরণ করে নিতে এখন পুরো প্রস্তুত জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পাওয়া রাম সাগর।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে রামসাগর। রাজপরিবারের ইতিহাস বুকে বয়ে বেড়ানো ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার আয়তনের এই দীঘির দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। প্রায় ১০ ফুট গভীর রাম সাগর খনন করা হয়েছিল ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।

জানা যায়, সেচ সুবিধা, প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করা এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের কাজের বিনিময়ে খাদ্যের সংস্থান হিসেবেই রাজা রামনাথের আমলে এ দীঘি খনন করা হয়। তার নাম অনুসারেই এর নাম রাখা হয় রাম সাগর। দীঘিটি খনন করতে সেই সময়ই প্রায় ৩০ হাজার টাকা ১৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। পরে নয়নাভিরাম এই দীঘির পশ্চিম প্রান্তে বেলেপাথর দিয়ে তৈরি করা হয় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের পাথরের ঘাট।

বিজ্ঞাপন

রাম সাগরের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একটি ডাক বাংলো, তার পাশেই চিড়িয়াখানা। অজগর সাপ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে সেখানে। এর দক্ষিণ পাশেই রয়েছে একটি শিশু পার্ক। শিশুদের খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি রয়েছে পার্কটিতে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন রাম সাগরে। তবে মাঝখানে কিছুদিন মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল এই পর্যটনকেন্দ্র। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশের নিয়মিত টহল আর সক্রিয় কার্যক্রমে ফের নিরাপদ হয়ে উঠেছে রামসাগর। তাতে করে পর্যটকদের মধ্যেও ফিরেছে স্বস্তি। রাম সাগর জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষও বলছে, ঈদে পর্যটকদের বাড়তি চাপ নিতেও তারা প্রস্তুত।

যেভাবে যাবেন রামসাগর

দিনাজপুর জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত রাম সাগর। রাম সাগরে যাওয়ার জন্য দিনাজপুর শহরের কাচারি গেট থেকে সরাসরি ইজি বাইক পাওয়া যায়, তাতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। আর রাম সাগরের গেটেই পাওয়া যাবে ব্যাটারিচালিত ভ্যান। তাতে একশ টাকার মধ্যেই গোটা এলাকা ঘুরে আসা যাবে। তবে পর্যটকদের চাপ বেশি থাকলে এ খরচও কিছু বাড়তে পারে।

এদিকে, দিনাজপুরের সঙ্গেও দেশের প্রায় সব এলাকার যোগাযোগই বেশ ভালো। ঢাকা থেকে সরাসরি বাস রয়েছে বড় বড় পরিবহনগুলোর, ট্রেনও রয়েছে। বাস-ট্রেনের ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে চড়েও যাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে নামতে হবে সৈয়দপুর। সেখান থেকে আবার চড়তে হবে বাসে।

থাকবেন কোথায়

রাম সাগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরেই স্থানীয় বন বিভাগের ডাক বাংলো রয়েছে। সেখানে থাকতে হলে আগে থেকেই বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। দিনাজপুর শহরে মিশন রোড এলাকায় জেলা সার্কিট হাউজ, হাউজিং মোড় এলাকায় পর্যটন মোটেলেও থাকা যাবে। ঢাকা থেকেও বুকিং দেওয়া যাবে এসব হাউজে। এ ছাড়া শহরের মালদহপট্টি, চারু বাবুর মোড়, গণেশতলা ও স্টেশন রোড এলাকায় আবাসিক হোটেলও রয়েছে। সেগুলোতে একেক দিনের জন্য খরচ হবে  সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

খাবেন কী

রাম সাগরের মূল প্রবেশ গেটের সামনেই রুহুলের হোটেল বেশ পরিচিত এবং পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। পাশেই নশনাদীঘির মোড়ে গরুর মাংসের ভালো রান্না মিলবে। এছাড়া খাসি-মুরগি ও বড় আকারের মাছের জন্য দিনাজপুর শহরের নিমতলার মুন্সি হোটেল, হাঁসের বিশেষ রান্না মাংসের জন্য লক্ষ্মীতলা, গরুর মাংসের জন্য শহরের সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকার রুস্তম হোটেল, বালুয়াডাঙ্গায় বেড়ার হোটেলসহ আরও বেশকিছু মানসম্মত খাবার হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে খাওয়া খরচও থাকবে সাধ্যের মধ্যেই।

সারাবাংলা/টিআর

দিনাজপুর ভ্রমণ রাম সাগর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর