ঈদে ঘুরে আসতে পারেন ‘চর বিজয়’
২৩ আগস্ট ২০১৮ ১০:০৬
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
বরিশাল: লাল কাঁকড়ার ঝাঁক দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন লাল কার্পেট বিছানো। বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো অতিথি পাখির নয়নাভিরাম দৃশ্য ভরিয়ে দেবে মন। চারদিকে অথৈ জলের মাঝে এ যেন অন্য এক কুয়াকাটা। বিজয়ের মাসে একদল পর্যটক সাগর ভ্রমণে গিয়ে পেয়েছেন সৌন্দর্যে ভরা এই চরের সন্ধান। তারাই এর নাম রেখেছেন ‘চরবিজয়’। সমুদ্রের মাঝখানে একটি দ্বীপ। আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার একর।
সরেজমিনে দেখা মিলছে, লাল কাঁকড়া আর লাখ লাখ অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে আছে। এর মধ্যে অনায়াসে কাজ করে যাচ্ছেন জেলেরা। কেউ জাল বুনছে, কেউ মাছ বাছাই করছে, কেউ ট্রলার বা নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম করতে করতে খোশগল্পে মেতে আছেন। অনেকে আবার শুটকি তৈরিতে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করছেন। দেখে মনে হবে এটি নতুন কোন স্থান নয়। জেলেদের কাছে বছরখানেক আগে জেগে ওঠা এই চরটি খুব পরিচিত হলেও সম্প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহরে কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে দুই ঘণ্টার নৌপথে পারি দিয়ে সাগরের মাঝের স্থলভূমিটি।
জানা গেছে, আব্দুল হাই নামে এক মাঝি প্রথম এই চর আবিষ্কার করেন বিধায় ‘হাইয়ের চর’ নামে সমধিক পরিচিতি পায় । তবে বর্তমানে এই চরটির নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। নাম করন করা হয়েছে ‘চর বিজয়।’ বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা পর্যটন স্পট থেকে দক্ষিণ পূর্বে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষে দ্বীপটির অবস্থান।
কুয়াকাটাকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে নতুনের সন্ধানে বের হয় কুয়াকাটা সী ট্যুরিজম। ঘুরে বেড়ানোর পথে দেখা মেলে সৃষ্টির দৃষ্টি নন্দিত এ চর। কুয়াকাটা সমুদ্র পথে আরও একটি দর্শনীয় স্পট হয়ে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কুয়াকাটার ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষ।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গামতি সমুদ্রসৈকত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাগরের মধ্যে চরটি জেগে উঠেছে। এটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার কিলোমিটার এবং প্রস্থ দুই কিলোমিটার।
চরটি ঘুরে কুয়াকাটায় ফিরে আসা ঢাকা বনশ্রীর দম্পতি মাহমুদা বেগম বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুর করেছি। কুয়াকাটার কাছেই গভীর সমুদ্রে এমন চোখ জুড়ানো একটি দ্বীপ আছে, তা চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমাদের দেশে এরকম একটি চর জেগে উঠছে, এটি কুয়াকাটার জন্য আর্শিবাদ।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ওই চরে যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। সম্প্রতি ওই চরে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। আমাদের সমুদ্রের মধ্যে এত সুন্দর একটি চর জেগে আছে তা আগে জানতাম না। এই চরের মাধ্যমে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, কুয়াকাটা গভীর সমুদ্রে যে চর বিজয় জেগে উঠেছে। অজানা লাখ লাখ পাখির কলরব আর লাল কাকড়ার বিচরণে আকড়ে আছে বিশাল এ চরটিতে। এসব দৃশ্য দেখে পর্যটকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে। তাই এই চর বিজয়কে পর্যটনের আওতাভূক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, লাল কাঁকড়ার ঝাঁক দেখলে মনে হবে যেন ঝরা হিজল ফুল বিছিয়ে আছে গোটা চরে। হরেক রকম অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে চরটিতে এক ভিন্ন আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। পর্যটকদের সুবিধার জন্য কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা দরকার।
সারাবাংলা/এমএইচ