ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির
২৩ আগস্ট ২০১৮ ১২:৫৩
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দিনাজপুর: প্রাচীনকাল থেকেই দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি উর্বর ও পলিময় হওয়ায় পাথর সংকট ছিল। পাথর অভাবে দেশিয় ধারায় পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিল কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শিল্পীরা।
হাজার বছর থেকে ইতিহাস ঐতিহ্য বহনকারী কান্তজিউ (কান্তজির) মন্দিরের দেয়াল জুড়ে পোড়া মাটির টেরাকোটা শিল্প নিদর্শন দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীনকালের নানা চিত্র। প্রাচীন সব চিত্রের মধ্যে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। কান্তজিউ মন্দিরটি ঘুরে দেখলে মনে হবে যেন, চার খণ্ডে শিল্পঅংকিত এক পৌরাণিক মহাকাব্যের দৃশ্যমান উপস্থাপনা। টেরাকোটায় এই সুন্দর কারুকার্য উপমহাদেশের আর নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর কোল ঘেঁষে সবুজ গাছ-গাছালির ছায়ার মাঝে নিরিবিলি এক পল্লীতে অবস্থিত কান্তজিউ মন্দির। ১৭২২ সালে তৎকালীন স্থানীয় মহারাজা প্রাণনাথের তত্বাবধানে কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মহারাজা প্রাণনাথের মৃত্যুর পর মন্দির নির্মাণ কাজ শেষ করেন তার দত্তক পুত্র মহারাজ রামনাথ। ১৭৫২ সালে সম্পন্ন হয় মন্দিরের নির্মাণ কাজ।
শিল্পীরা টেরাকোটা শিল্প দিয়ে মন্দিরটির দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তুলে আদিকালের বনে পশু শিকার, রাজকীয় শোভাযাত্রা, পৌরাণিক দৃশ্যাবলি, সমুদ্রগামী জাহাজ, রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী, সম্রাট আকবরের জীবদ্দশার কাহিনী, শ্রীকৃঞ্চসহ প্রাচীনকালের বিভিন্ন ঐতিহাসিক দৃশ্য। প্রাচীনকালের এ সব দৃশ্য মন্দির দেয়ালে আজও হাজার বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করছে।
প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছে হাজারো পর্যটক। ঈদ-উল আজহায় পশু কুরবানির কারণে অনেকেই ঘুরতে পারে না। তাই ঈদের পরদিন বৃহস্প্রতিবার (২৩ আগস্ট) কান্তজিউ মন্দির এলাকায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে স্বপরিবারে আসা মো. ইমতিয়াজ আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, হাজার বছরের ইতিহাস বহনকারী কান্তজিউ মন্দির দেখতে এসেছি। এখানে এলে বিনোদনের পাশাপাশি সন্তানদের হাজার বছরের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারি।
তিনি জানান, কান্তজিউ মন্দিরে ঈদের ছুটিতে স্বপরিবারে বেড়াতে এসেছি। এখানে ইতোপূর্বেও একাধিকবার এসেছি। এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে বেশ ভালো লাগছে। মন্দির পরিদর্শন শেষে কান্তনগর মোড়ে স্বপরিবারে দুপুরের খাওয়া খেয়ে রওনা দিব।
কিভাবে যাবেন: দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তজিউ মন্দিরে বাস-ট্রেন ও আকাশ পথে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে সার্বক্ষণিক বাস চলাচল করে। বাস চেপে সরাসরি কান্তনগর মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি মন্দির যেতে ইজিবাইকে জনপ্রতি ৫-১০ টাকা ভাড়া নেবে। এ ছাড়া ট্রেন চেপে ঢাকা থেকে সরাসরি দিনাজপুর শহরে যাওয়া যায়। দিবা-রাত্রী দুটি ট্রেন চলাচল করে। দিনাজপুর শহর থেকে কান্তনগর মোড়ে যাবেন বাস বা ইজিবাইকে করে। আকাশ পথেও যাওয়া যায় সহজে। ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে এখন বিমান সব সময় নিয়মিত চলাচল করছে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কান্তনগর মোড়ে বাস যোগে যাওয়া যায়।
খাবার জায়গা: কান্তজিউ মন্দির আশপাশ এলাকায় একাধিক খাবার হোটেল রয়েছে। তবে একটু দক্ষিণে গেলে দশমাইলে মাছ-মুরগীর ভালো ভালো খাবারের হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর শহরে একাধিক ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে।
থাকবেন কোথায়: কান্তজিউ মন্দির সংলগ্ন পর্যটকদের জন্য রয়েছে একটি ডাক বাংলো ও পর্যটন মোটেল। এই প্রতিষ্ঠানে থাকার পাশাপাশি রয়েছে খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা। এ ছাড়া দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সারাবাংলা/এমআই