ক্রমেই বাড়ছে চামড়া ব্যবসায়ীদের শঙ্কা
২৩ আগস্ট ২০১৮ ২০:৪৬
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘যত সময় যাচ্ছে ততই চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। সন্ধ্যার আগে যে চামড়ার দাম ছিল ৭০০ টাকা, সে চামড়া এখন বলছে ৫০০ টাকা। অথচ এ দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে হয়েছে। এখন যদি এ দামেও বিক্রি না করি তাহলে যত রাত হবে তত লোকসান বাড়তে থাকবে। একটু আগে যিনি দাম বলেছেন ৫০০ টাকা, এখন তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চামড়াগুলো কোথায় বিক্রি করব বুঝতে পারছি না।’
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অস্থায়ী চামড়ার হাটে চামড়া বিক্রি করতে এসে বাজারের দৈন্যদশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শনির আখড়ার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. আরিফ।
তার মতে, একটু লাভের আশায় খুচরা বিক্রেতা ও বিভিন্ন মাদ্রাসার লোকজন থেকে চামড়া কিনে এখন উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ গতকাল চামড়ার যে দাম ছিল আজ সে দাম নেই। ফলে আজ যেসব চামড়া তিনি কিনেছেন সেগুলো লাভ তো দূরের কথা, চালান ধরে বিক্রি করা যাবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
এ অবস্থা শুধু আরিফের নয়, সেখানে আরও ৩৫ থেকে ৪০ জন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানালেন একই শঙ্কার কথা। ঠিক যেন সন্ধ্যার আঁধারে নিভে যাচ্ছে তাদের প্রত্যাশার আলো। যতই রাত বাড়ছে, ততই তাদের চোখ-মুখে ক্রমেই লোকসানের শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
অপর এক ব্যবসায়ী রাতুল সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে ৫১টা চামড়া কিনেছি। কিন্তু এগুলো নিয়ে দ্রুত এখানে আসতে আসতে সন্ধ্য হয়ে গেল। এখানে এসে ১ ঘণ্টা ধরে চামড়া নিয়ে বসে আছি। কিন্তু একটাও বিক্রি করতে পারিনি। দু একজন কিনতে আসে, তাও আবার কেনা দামের চেয়ে কম দাম দিতে চায়। গতকাল চামড়া বিক্রি করে প্রতিটিতে একশ-দেড়শ টাকা লাভ হয়েছিল, আজ মনে হয় প্রতিটি চামড়ায় দেড়শ-দুইশ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
তিনি জানান, গতকাল তিনি দেড়শ চামড়া বিক্রি করেছিলেন প্রতিটি এক থেকে দেড়শ টাকা লাভে। অর্থাৎ প্রতিটি চামড়া বিক্রি করেছেন গড়ে ৯০০ টাকা করে। এ কারণে আজও বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ৪৫ টা চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু একই হাটে এসে একদিনের ব্যবধানী একই ধরনের চামড়ার দাম কমেছে গড়ে দুই থেকে তিনশ টাকা। এতে চালান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি সহ সেখানে বিক্রি করতে আসা একাধিক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী।
নুর আলম নামে এক ব্যবসায়ী মিরপুর থেকে ৩৯ টি চামড়া বোঝাই পিকআপ নিয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিলেন বিক্রয়ের জন্য। তিনি বলেন, ‘সারাদিন চারজন মিলে খাটলাম, একটা পিকআপ ভ্যান ভাড়া করলাম। এসব মিলিয়ে যদি চামড়াগুলো লাভ তো দূরে থাক, চালান টা নিয়েও বিক্রি করতে পারি তাহলেও অন্তত লোকসান থেকে বেঁচে যেতাম। আমি এ ব্যবসা তেমন বুঝি না। এবারই প্রথম। ১ লাখ টাকা নিয়ে নেমেছিলাম। এখন মনে হয় লোকসান গুনতে হবে।’
হাটে হাজারীবাগের একজন আড়তদার আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, চামড়ার দাম কমে যায়নি। যেগুলো কেনার মতো সেগুলো আমরা কিনছি। এক্ষেত্রে তারা দাম বেশি চাইছে। কিন্তু আমরা তো বেশি দাম দিয়ে কিনতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, চামড়ার দাম কমেনি। বরং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা নিয়ে মাঠ কিংবা বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে আনে। কিন্তু আমাদের কাছে এসে সে দাম পায় না।
সারাবাংলা/এসএইচ/একে