Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাগরিক অসহযোগিতায় ব্যর্থ নিয়মতান্ত্রিক কোরবানি ব্যবস্থা


২৪ আগস্ট ২০১৮ ১১:৩৯

।। মাকসুদা আজীজ ও সাদ্দাম হোসাইন ।।

ঢাকা: ঈদ-উল-আজহায় নগরীর অলিতে গলিতে কোরবানির অভ্যাস নগরবাসীর বহুদিনের। এই নগরের যখন গোড়াপত্তন হয় তখন থেকে সবাই যার যার আঙ্গিনাতেই কোরবানি দিতেন। জনবহুল এ নগরীতে গগনচুম্বী দালানে শতাধিক মানুষের আবাস হওয়ার পরেও এই অভ্যাস ধরে রেখেছে নগরবাসী। এই অভ্যাসের ফলে নগরী বহুদিন ভুগেছে কোরবানির পরে বর্জ্য, রক্ত আর আবর্জনার সাগরে। অনেক পরে হলেও নগরের রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন যখন কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেখানে যেতেও দারুণ অনীহা নগরবাসীর। ফলাফল, সেই একই রক্ত মাখা পথ, কসাইখানা নগর।

বিজ্ঞাপন

দ্রুত বর্জ্য সরানোর সুবিধার্থে পশু জবাইয়ের জন্য কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার এটি ছিল তৃতীয় বছর। গত বছর থেকেই দুই করপোরেশনের সবগুলো ওয়ার্ডে একাধিক জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর মোট ৭৮৫টি স্থান নির্বাচন করে দেওয়া হয় সিটি করপোরেশন থেকে। তার ৬০২টি ছিল দক্ষিণ ও ১৮৩টি ছিল উত্তর সিটি করপোরেশনের। যেসব জায়গায় নাগরিকদের নিজেদের সুবিধা ছিল না সেখানে শামিয়ানাও খাটিয়ে দেওয়া হয় দুই সিটি করপোরেশন থেকে। এভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের থেকে ৩৫০টি এবং উত্তরে ১৮৩টি স্থানে বাঁশ, কাপড় ও ত্রিপল দিয়ে শামিয়ানা করে দেওয়া হয়, সেখানে রাখা হয় পানি, কসাই এমনকি ইমামও।

ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর কর পর্যালোচনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নানের সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র এক একটি শামিয়ানা বাবদ খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এই প্রকল্পের সফলতার মান বিচারে দেখা যায়, এ নির্ধারিত স্থানে খুব কম নাগরিকই পশু কোরবানি দিতে এসেছে। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এটা স্বীকার করেও নেন যে তিন বছর হয়ে গেলেও পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানের এই পরিকল্পনা অনেকটাই বিফল হয়েছে, কারণ নাগরিকদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের দিন পশু কোরবানির প্যান্ডেলগুলোতে গরু বেঁধে রাখা হয়েছিল, অনেকে সেখানে মাংস ভাগ করেছে। এমনকি কিছু জায়গা ব্যবহৃত হয়েছে মাংস বিক্রির কাজেও। কিন্তু যে সম্মিলিত পশু কোরবানির লক্ষ্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা গিয়েছে বিফলে।

এ বিষয়ে সারাবাংলার আলাপ হয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে যার একটি বড় অংশ ব্যয় হয়েছে এই শামিয়ানা তৈরিতে, এ ছাড়াও অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য কাজে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।

এয়ার কমোডোর জাহিদ আরও জানান, যদি নাগরিকরা নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানির এই উদ্যোগে সাড়া দিত তাহলে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সহজ হতো এবং আরও অনেক কম সময়ের মধ্যে শহর থেকে বর্জ্য অপসারণ করা যেত।

নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দিলে যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হয় তার দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে এই বছর কোরবানিতে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড ও ১৭নং ওয়ার্ডের নাগরিকরা নিময়তান্ত্রিকভাবে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করায় মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে এই দুই ওয়ার্ডের সকল বর্জ্য অপসারণ করে ফেলা সম্ভব হয়।

উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ড. জিন্নাত আলি সারাবাংলাকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে মোট পাঁচটা স্থানে শামিয়ানা খাটানো হয়। এ জায়গাগুলোতে আমি গিয়ে গিয়ে নাগরিকদের নির্ধারিত স্থানে আসার অনুরোধ করি। নাগরিকরা উৎসাহ নিয়ে সাড়া দেন। ফলে ছয়টার মধ্যেই আমাদের এলাকা পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।

এই কাউন্সিলর মনে করেন, শুধু শামিয়ানা বানিয়ে দিলেই হবে না, কোথায় শামিয়ানা খাটাতে হবে এই বিষয়ে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে একটি পরিকল্পনা করতে হবে। এলাকার যেসব ইমাম পশু কোরবানি দিবেন তাদেরও নির্ধারিত স্থানের বিষয় সচেতন করতে হবে, তাহলেই কেবল এই প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখবে অন্যথায় নয়।

পরপর তিন বছর পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করার পরেও নাগরিকরা এই প্রকল্পে সাড়া না দিয়ে নগরকে যত্রতত্র নোংরা করছে এর বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন কোনো আইন তৈরি করবে কি না, প্রশ্ন রাখা হয় দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে। তিনি বলেন, আমরা এখনই কোনো আইন প্রয়োগের পথে যেতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করছি সচেতনতার মধ্য দিয়েই এই প্রকল্প সফল করতে পারব।

তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মনে করেন, কোরবানির নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দেওয়ার পরেও নিজ বাড়ির আঙিনাতে যদি কেউ কোরবানি করতে চায় তাদের জন্য একটা অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করতে পারে সিটি করপোরেশন। এভাবে পরোক্ষ উপায়ে নাগরিকরা নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে উৎসাহী হবে, পাশাপাশি এতে পরিচ্ছন্নতা বাবদ সিটি করপোরেশনের যে অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝাও কিছুটা লাঘব, এমনই মত এই স্থপতির।

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

কোরবানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর