যাদুর শহর ঢাকা: কেউ যায়, কেউ আসে
২৪ আগস্ট ২০১৮ ১৪:১৩
।। মেসবাহ শিমুল,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঈদের ছুটির সঙ্গে শুক্র ও শনিবার যোগ হওয়ায় ঈদের আনন্দ এবার দীর্ঘ হয়েছে নাগরিক জীবনে। তাই শুক্রবারও যাদুর শহর ঢাকা ছাড়ছে হাজারো মানুষ। সকাল থেকে বাস, ট্রেন আর লঞ্চ টার্মিনালে এসব মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
ঢাকা ছাড়ার পাশাপাশি শুক্রবার থেকেই নগরীতে আসতে শুরু করেছেন পরিবারের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া অনেকে। পরিবার পরিজন নিয়ে যারা একটু আগেভাগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তারা নগরীতে ভিড়ছেন কোনো ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই।
শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে এমন চিত্র।
দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৬ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়ায় সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। মুহূর্তেই সেটি যাত্রীতে ঠাসাঠাসি অবস্থা। যদিও এর আগে এসব যাত্রীকে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ঈদের তিন দিন আগে থেকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় শুরু হলেও শুক্রবারেও তার কিছুটা দেখা গেলো কমলাপুরে। দুএকটি ট্রেন সময়মতো প্লাটফর্ম ছাড়তে পারলেও কিছু-কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের বহুপরে ফিরছে কমলাপুরে। আর যেগুলো আসতে দেরি করছে যাবার বেলায়ও সেগুলো পিছিয়ে পড়ছে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৯টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা নাগাদ সেটি কমলাপুরে এসে পৌঁছেনি। তবে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, চাপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের চট্টলা এক্সপ্রেস, নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসসহ দুপুরের দিকের ট্রেনগুলো মোটামুটি টাইম মেনেই স্টেশন ছাড়বে এমনটা জানিয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, ঈদের বিশেষ ট্রেন সার্ভিস শেষ না হতেই ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে যাত্রীরা। এতে করে শতভাগ নিয়মে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিডিউল বিপর্যয় নেই। শনিবার থেকে ঢাকামূখী যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
সিলেটগামী চলিন্তকা ট্রেনের যাত্রী বশির উদ্দিন জানান, ঝামেলা এড়াতে ইচ্ছা করেই ঈদের পরে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ যাচ্ছি। টেলিভিশনে এ কদিন যে কমলাপুর দেখেছি এখন অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আশা করছি পরিবার নিয়ে সহজেই বাড়িতে যেতে পারবো।
রেল কর্তপক্ষ বলছে, ঈদের পরে মূলত ঢাকার আশপাশের জেলার যাত্রীদের চাপ বেশি। যারা রাজধানীতে মজুরিভিত্তিক কাজকর্ম করে থাকেন তাদের বেশিরভাগই ঈদের পরে ঢাকা ছাড়েন। এ জন্য আন্তঃনগর ট্রেন, কমিউটার ট্রেনগুলোতে চাপ রয়েছে।
তিতাস কমিউটার ট্রেনের যাত্রী শাফায়েত হোসেন বলেন, ঈদের সময় অনেক কাজ থাকে। তাই আগে ভাগে বাড়ি গেলে চলে না। বাড়তি টাকা ইনকামের জন্য ঈদের সময় অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয়। এখন বাড়ি গেলে সপ্তাহখানেক থাকা যাবে।
এদিকে রাজধানীর দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো ঈদের তৃতীয় দিনে অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার যাত্রীর চাপ কমেছে। তবে তারপরও যা হচ্ছে তাতে গাড়ি সময়মতো ছাড়া যাচ্ছে।
সায়েদাবাদ জনপথের মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি কাউন্টার ম্যান মিনহাজুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীর চাপ বেশ ভালই ছিল, তবে অন্যান্য জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরের যাত্রীর চাপ কমেছে। তবে ফিরতি গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে যাত্রীর চাপ এখনো ততোটা নয় বলে জানান তিনি।
তবে সায়েদাবাদে যাত্রীর আনাগোনো বেশ চোখে পড়লেও কমলাপুর, আরামবাগ, ফকিরাপুল এলাকার বাস কাউন্টারগুলো অনেকটা ফাঁকা দেখা গেছে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে শুক্রবারও যাত্রীর চাপ লক্ষ্য করা গেছে। সেই সঙ্গে দুপুর নাগাদ অন্তত অর্ধশত লঞ্চ দক্ষিণের বিভিন্ন রুট থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রীর চাপ খুব বেশি না হওয়ায় যারা আসছেন তারা আরামে যেতে পারছেন।
সারাবাংলা/এমএস/এমআই