‘বিএনপির অনেক প্রধান নেতার দণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা আছে’
২৫ আগস্ট ২০১৮ ১২:৪৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘটনা ও বাস্তবতার নিরিখে হবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই রায়ে বিএনপির অনেক প্রধান নেতার দণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৫ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন টানেল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
২১ আগস্টের হামলার বিচারে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করছে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ছিল একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যেখানে আইভি রহমানসহ ২৪ জনের প্রাণের প্রদীপ নিভে গেছে। প্রধানমন্ত্রী তো আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছেন। তো, এরকম একটা নির্মম, বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড যেখানে ঘটেছে, সেটার রায় হতে যাচ্ছে। কারা জড়িত সেটা বিচারালয় সিদ্ধান্ত নেবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
‘আমরা আশা করি, বাস্তবতার নিরিখেই রায় হবে। ঘটনা যা ঘটেছে, সেই নিরিখেই রায় হবে। বিচার বিভাগ তার স্বাধীন কার্যক্রমের আওতায় স্বাধীন সিদ্ধান্ত দেবে, রায় দেবে। এতে বিএনপির অনেক নেতার জড়িতও হওয়ার আশঙ্কা আছে, প্রধান প্রধান নেতা। সুতরাং তারা যদি কনভিকটেড (দণ্ডিত) হয়, সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাহলে তো বলাই যায় যে, তাদের অস্তিত্ব কিছুটা সংকটের মুখে পড়বে।’
সংকটের মুখে পড়লেও বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি একটা বড় দল, তাদের অস্তিত্ব থাকবে। আমি বলছি, রাজনৈতিক অস্তিত্ব কিছুটা সংকটের মুখে পড়বে। সংকটে তো পড়তেই পারে।
বিএনপি গ্রেনেড হামলার দায় এড়াতে পারে না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্টের কিলিংয়ে (হত্যাকাণ্ড) প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) টার্গেট ছিলেন। বিএনপি সরকার তখন ক্ষমতায়। সারাদেশ জানে হাওয়া ভবনের পরিকল্পনার কথা। এগুলো এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। বিএনপি তো এই হামলার দায় এড়াতে পারে না।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দলের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি বর্তমানে বিচারের শেষ পর্যায়ে আছে। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হবে বলে তিনি আশাবাদী। মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ কয়েকজন নেতাও আসামি হিসেবে আছেন।
কোটা ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে বিদেশি ইন্ধন ছিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আমি অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ি না। থাকলে সেটা আস্তে আস্তে বের হবে।’
তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের শুরুটা বাইরের ইন্ধনে হয়েছে, সেটা আমি মনে করি না। তবে পরে বাইরের ইন্ধন ও উসকানি যুক্ত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন, দুই কিশোর-কিশোরীর মৃত্যুর পর যে আন্দোলনটা হয়েছে, এটা একেবারে যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু আন্দোলন যখন একটা পর্যায়ে গেছে, তখন শেষ সময়ে এসে ইন্ধন যুক্ত হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা হয়েছে। গুজব সন্ত্রাস করে দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্ত হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমির খসরু সাহেব, তিনি কুমিল্লার নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডাকলেন। আন্দোলন হচ্ছে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের। আন্দোলনটা ক্ষমতা দখলের জন্য ছিল না। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতা দখলের জন্য নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নিরাপদ রাস্তা খুঁজছিলেন। তারা নিজেদের আন্দোলনে ব্যর্থতার পর শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করেছিলেন।’
এ সময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার বাবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ
ওবায়দুল কাদের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বিএনপি নেতাদের দণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা