Wednesday 02 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঝুঁকি-শঙ্কায় রোহিঙ্গাদের এক বছর


২৫ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৪২ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৮ ১৪:১১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক মাকে ঘিরে চার শিশু

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ওরা এসে প্রথমে ঘরের ভেতরে গুলি করে, তারপর আমাদের অত্যাচার করে। যাবার সময় বাড়িটা পুড়িয়ে দিয়ে যায়। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা পালিয়ে এসেছিলাম, তারপর থেকে এখানে অনিশ্চিত আর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে আমাদের—বলছিলেন জয়নাব বেগম। একইসঙ্গে ৪৫ বছরের জয়নাব বেগম দেশে ফিরে যেতে পারবেন কি না সে নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন।

কেবল জয়নব বেগমই নন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গণহত্যার কবল আর বাড়িঘর ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। তারা বিশ্বাস করছেন—মিয়ানমার সরকার তাদেরকে নাগরিক মর্যাদা দিয়ে ফেরত নেবে না।

বিজ্ঞাপন

আজ ২৫ আগস্ট—বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে এক বছর পূর্ণ করছেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এই একবছরের নিজ দেশে ফেরত যাবার বিষয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ‘দেন-দরবার’ হলেও সেখানে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং, এখনও নির্যাতন চলছে রাখাইনে। তারই ফলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের স্রোত এখনও বন্ধ হয়নি। এ পরিস্থিতিতেই রোহিঙ্গা সংকটের একবছরের মাথায় এসে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরেফিরে আসছে।

আর বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর থেকে দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয় শিবিরে। এখানকার পাঁচটি আশ্রয় শিবিরে স্থান হয়েছে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গার।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা উনিশ বছরের আছিয়া বেগম সারাবাংলাকে বলছিলেন তার জীবনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। আছিয়া বলেন, গত আগস্টের শুরুর দিকের এক ভয়ঙ্কর সকাল কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের সব স্বস্তি আর সম্ভ্রম। সেদিন হঠাৎ করেই তাদের বাড়িতে হানা দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন বিশেকের একটি দল, সঙ্গে আরও কয়েকজন স্থানীয় মগ।

তারা দলে দলে ভাগ হয়ে প্রথমেই গুলি করে মেরে ফেলে তার বড় ভাই আব্বাসকে (৩০)। একদল তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্য আরেকদল তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন।

নির্যাতিতার পৌঢ় মা বলেন, দুই মেয়ের হাত ধরে এক কাপড়ে প্রতিবেশীর সাথে পালিয়ে আছি। কখনও দৌঁড়ে, কখনো হেঁটে, কখনও নৌকায় চড়ে কয়েকদিনের পথ পাড়ি দিয়ে এদেশে আসি। আসার বেশ কয়েকদিন পর মাথা গোজার ঠাঁয় মেলে শরণার্থী শিবিরে। তবে এর মাসখানেক পরেই যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মাথায় বলেন তিনি। সেদিন বুঝতে পারেন তার অবিবাহিত মেয়েটি অন্তসত্ত্বা।

খুব ভালো করে লক্ষ্য না করলে বোঝাই যাবে না ১৯ বছরের মেয়েটি গর্ভবতী। হাড় জিরজিরে শরীর, চোখের নীচে কালচে দাগ, কারু সঙ্গে কথাও বলেন না বলে জানালেন তাদের পাশের ঘরের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম।

সুফিয়া বলেন, দুই মেয়ে আর মায়ের সংসারে বড়ই অভাব। মাছ-মাংস কিনে খাবার সামর্থ্য নাই। সেদিন তার ঘরে শুটকি মাছ রান্না হলে একটুখানি দিয়েছিলেন।

আছিয়ার মা জানালেন, প্রতিদিন পানি ভাত আর শাক ভাতে বা ডাল খেতে খেতে তার নিজেরই অরুচি ধরে গেছে । আর মেয়ের এমন সময়ে কি করে খায় এসব বলেন তিনি।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বিধবা হলেও মিয়ানমারে ভালই ছিলেন। চাষের জমি ছিল, বড় ছেলেটি ছোট একটা চাকরি করত। হাতের কাজ করত দুই মেয়ে।

নিজের দেশে ফিরতে চান কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘শত কষ্টের পরও এ দেশত গম (ভাল) আছি, নিরাপদ আছি, ওই বর্বরদের দেশত ন যাইউম (যাব না)।

তার পরিবারের সঙ্গে যে নিষ্ঠুরতা আর বর্বরতা হয়েছে তার বিচার চান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, বিচার অবশ্যই চাই।

তার অবিবাহিত কমবয়সী মেয়েটির কোল জুড়ে যে শিশু আসবে তাকে কীভাবে পালবেন? তার মেয়েই বা বাচ্চাটাকে মেনে নেবে কি না? এমন হাজারও প্রশ্ন আর দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গেছে বলেন আছিয়ার মা।

আছিয়ার মায়ের মত যারা তাদের নিজের দেশে সেনাসদস্যদের হাতে স্বামী-সন্তান হারিয়েছেন তারাও আর ফিরে যেতে চান না মিয়ানমারে–এমনটায় জানালেন উখিয়া ক্যাম্পে কাজ করা রেড ক্রিসেন্টের একজন স্বেচ্ছাসেবক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, মিয়ানমারে ধর্ষণ আর নির্যাতনের শিকার ছেলে বা মেয়ে কেউ আর তাদের দেশে ফেরাটা নিরাপদ মনে করছে না।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

লড়াই শেষ হয়নি: নাহিদ
২ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩২

আরো

সম্পর্কিত খবর