আইনজীবীকে ফাঁসিয়ে বিতর্কিত ওসি হিমাংশু বদলি
২৫ আগস্ট ২০১৮ ২১:০৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিমাংশু দাশ রানাকে জেলা পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃঞ্চ চৌধুরীকে অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি।
শনিবার (২৫ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা বদলির এই আদেশ জারি করেছেন।
এসপি নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, প্রশাসনিক কারণে নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওসি হিমাংশু দাশ রানাকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে। সাময়িকভাবে ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওসি’র দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্রমতে, এসপি’র আদেশে ওসি হিমাংশুকে প্রশাসনিক কারণে জেলা পুলিশ লাইনে এলওআর (লাইন অর্ডিনারি রিজার্ভ) পদে বদলির কথা বলা হয়েছে। পুলিশ বিভাগে এটি গুরুত্বহীন পদ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণের আগে এই ধরনের পদে বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বোয়ালখালী থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন- ওসি হিমাংশু দাশ রানা, এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই আরিফুল ইসলাম।
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৯ জুলাই আরিফুর এবং ১১ আগস্ট আতিকুরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার এই আদেশ দিয়েছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী এসপি নুরে আলম মিনা ওসি হিমাংশুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে সুপারিশ পাঠান। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ব প্রক্রিয়া হিসেবে হিমাংশুকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৭ মে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমরকে নগরীর লালদিঘীর পাড় এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় সমরকে।
গ্রেফতারের পর থেকে সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল- তাদের গ্রামের লন্ডণপ্রবাসী যুবক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশি স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের প্ররোচনায় ওসি হিমাংশু কুমার দাশের ইন্ধনে সমরকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সমরের পরিবার।
এই গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা। সমরের বাড়ি সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদে একটি সভায় গিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন ওসি হিমাংশু।
গত ২ জুলাই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এরপর ১২ জুলাই সমর জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল।
সমরকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে গত জুলাই মাসে বদলি করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/একে