ত্রিপুরা পল্লিতে অজ্ঞাত ভাইরাস সংক্রমণে ৪ শিশুর মৃত্যু
২৬ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৪৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ত্রিপুরা পল্লিতে অজ্ঞাত ভাইরাসের সংক্রমণে গত ছয় দিনে এক পরিবারের তিন জনসহ চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একই পল্লিতে আরও কমপক্ষে ২২ শিশু অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভাইরাস শনাক্ত করতে পাঁচ শিশুর রক্তের নমুনা ঢাকায় জনস্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।
হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামের ত্রিপুরা পল্লিতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তার উন নেছা শিউলি। গত মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) থেকে এই রোগে শিশু মারা যেতে শুরু করলেও রোববার (২৬ আগস্ট) প্রশাসন বিষয়টি জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার সকালে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর পেলে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ত্রিপুরা পল্লিতে যান। এরপর ২২ শিশুকে এনে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন।
ডা. ইমতিয়াজ উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, গত মঙ্গলবার এক শিশু মারা যায়। শুক্রবার মারা যায় আরও দু’জন। সবশেষ আজ রোববারও একটি শিশু মারা গেছে। এদের মধ্যে তিন শিশু একই পরিবারের।
মারা যাওয়া চার শিশু হলো— অন্ন বালা (৬), অন্ন রায় (৪), সৌম্য রায় (২) ও শিমুনি চাকমা (৪)।
শিমুনি চাকমার পরিবারে আরও তিন জন মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে ডা. ইমতিয়াজ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একই পরিবারের তিন জনসহ মোট ২২ শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের শরীরে জ্বর অনেক বেশি। কারও কারও হালকা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি, সর্দি আছে। শ্বাসকষ্টও আছে।’
‘এলাকায় গিয়ে যেটা জানতে পেরেছি— প্রতিটি শিশুই প্রথমে মারাত্মক জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এক পর্যায়ে তারা প্রাণ হারাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, কোনো ধরনের ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এই ভাইরাস এখনও শনাক্ত করা যায়নি। গুরুতর শারীরিক অবস্থার তিন শিশুসহ পাঁচ শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় জনস্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন প্রতিনিধিও আসছেন’— বলেন এই চিকিৎসক।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধিসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা সার্বিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। তবে এখনও রোগটা কী, সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য সোমবার ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি টিম চট্টগ্রামে আসবে। এই টিমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এছাড়া টিকা কর্মকর্তাও থাকবেন।
ইউএনও শিউলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘উদালিয়া ত্রিপুরা পল্লিতে আমাদের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। গত মঙ্গলবার থেকে শিশুরা মারা যেতে শুরু করলেও এসব পরিবারের কেউ ক্লিনিকেও যায়নি, উপজেলা সদরের হাসপাতালেও আসেনি। এলাকাটা খুবই দুর্গম।’ সমতল থেকে চার কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে ত্রিপুরা পল্লিতে যেতে হয় বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর