ফ্রন্টলাইনে আসতে যুক্তফ্রন্টের বাধা তারেক ও জামায়াত
২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৮:২৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চার সঙ্গে বিএনপির ঐক্যের প্রক্রিয়া শুরুতেই বড় বাধার মুখে পড়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে সরাসরি বাধ সেধেছেন। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতও চাইছে না জোটের পাশে স্থান পাক যুক্তফ্রন্ট।
সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অঙ্গনের নড়াচড়া থেকে জানা যাচ্ছিল, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত যুক্তফ্রন্ট তাদের হাত শক্তিশালী করতে বিএনপিকে পাশে চাইছে। অন্যদিকে রাজনীতিতে ফিরে আসতে যুক্তফ্রন্টকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার স্বপ্ন দেখে আসছে বিএনপিও। এমনকি আসন ভাগাভাগি নিয়েও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কিন্তু শেষ মূহূর্তে লন্ডন থেকে আসা বার্তা এ প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, যুক্তফ্রন্টের সাথে যোগসাজশে রাজনীতিতে ফেরার নতুন অঙ্ক কষছিলেন ঢাকায় বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। এ প্রক্রিয়ায় তারা জামায়াতকে দূরেই সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। ওদিকে যুক্তফ্রন্টেরও অন্যতম শর্ত ছিল— এই ঐক্যে জামায়াত থাকবে না। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রভাবাশালী দল জামায়াত এই সমীকরণ মানতে রাজি নয়। আর লন্ডন থেকে তারেক রহমানও জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কোনো ঐক্য তিনি চান না।
সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের কাছে পক্ষ থেকে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার মূল কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। তিনি যুক্তফ্রন্টেরও আহ্বায়ক। তবে তাকে মোটেই পছন্দ করেন না বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর সে কারণেই এই ঐক্যের সঙ্গে থাকতে চান না তিনি।
চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তারেক রহমান বিএনপির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হওয়ার পরই মূলত দলে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েন বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী। বাপ-ছেলেকে কোণঠাসা করে রাখতে সব কৌশলই প্রয়োগ করেন তিনি। অবশেষে বঙ্গভবন ও বিএনপি ছেড়ে মান-সম্মান নিয়ে সরে পড়তে হয় বি. চৌধুরীকে।
বি. চৌধুরীর প্রতি এখনও সেই নেতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছেন তারেক রহমান। তাই তার নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট নিয়ে ঘোর আপত্তি তার। কোনো অবস্থাতেই যুক্তফ্রন্টকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার পক্ষে নন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তবে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বি. চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য গঠনের চেষ্টা করে আসছিল বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ লক্ষ্যে কিছু দৌড়ঝাঁপও করেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই ঐক্যের সঙ্গে থাকার লক্ষ্যে গত ঈদুল ফিতরের পর বি. চৌধুরীর বাসায় যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন তাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা হয়। তখন সুযোগ বুঝে বিএনপির কাছে দেড়শ আসন চেয়ে বসেন যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপি নেতাদেরও দেখা যায়।
কিন্তু হঠাৎ করেই প্রক্রিয়াটি থমকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (২৫ আগস্ট) খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিএনপির মহাসচিবকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ২০ দলীয় জোট অক্ষুন্ন রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে। অর্থাৎ জামায়াতকে রেখেই বি. চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গেও ঐক্য করতে হবে বিএনপিকে।
কিন্তু যুক্তফ্রন্টের উদ্যোক্তরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনী জোট করতে আপত্তি নেই তাদের। তবে সেখানে জামায়াত থাকতে পারবে না। অবশ্য ঈদুল ফিতরের পর এক অনুষ্ঠানে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান সরাসরি বলেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। যদিও পরের দিনই নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছিলেন, বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির সঙ্গেও ঐক্য হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যুক্তফ্রন্ট নেতাদের আগ্রহ থাকলেও বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আপত্তির কারণেই বিএনপির সঙ্গে যুক্তঢফ্রন্টের ‘বৃহত্তর’ ঐক্যের সম্ভবনা ক্ষীণ।
তাছাড়া যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক বি. চৌধুরীর দেড়শ আসন দাবি এবং যেকোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘বিলোপ’ তত্ত্বকেও অবাস্তব হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির সন্দেহ, দল হিসেবে বিএনপি ও নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব করতেই এমন অভিনব ‘তত্ত্ব’ সামনে এনেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. বি. চৌধুরী।
এদিকে অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা গেছে, বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দকী, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার যুক্তফ্রন্ট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই ক্ষমতাসীনদের। নির্বাচনের মাঠে তারা এই জোটকে মোটেই বাধা মনে করছে না। জোটের শক্তি-সামর্থ্য ও ভোটকে মাথা ব্যথার কারণ হিসেবেও দেখছে না তারা।
এ ক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইনে আসতে বিএনপিকেই অবলম্বন করে এগোতে হবে যুক্তফ্রন্টকে। আর সেখানেই শক্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আব্দুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো দল বা জোটের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ-বাটোয়ারা করার জন্য আমরা জোট গঠন করিনি। যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের এই ধারণার সঙ্গে যারা একমত পোষণ করবে, তাদের সঙ্গেই কেবল আমাদের ঐক্য হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। হলেও বিষয়টি আমার জানা নেই।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর