প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি
২৯ আগস্ট ২০১৮ ০৮:২৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ১ সেপ্টেম্বর নগরীর লালদিঘী ময়দানে সমাবেশ করতে চায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে নিষ্ক্রিয় অবস্থা কাটিয়ে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিচ্ছে দলটি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরদার আন্দোলন শুরু করতে হলে এই মুহূর্তে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে সক্রিয় হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া সম্প্রতি যুবদল ও স্বেচ্ছাবেক দলেরও নতুন কমিটি হয়েছে। এর ফলে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে রুটিন সভা-সমাবেশের বাইরে এসে রাজপথে শক্ত অবস্থান নেওয়ার এখনই চূড়ান্ত সময় বলেও মনে করছেন দলটির চট্টগ্রামের নেতারা।
তবে এসব বিষয় প্রকাশ্যে আনলে পুলিশের ধরপাকড় শুরুর আশঙ্কায় বিএনপি নেতারা মুখ খুলতেও রাজি নন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সারাবাংলাকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই আমরা লালদিঘীর ময়দানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের আবেদন করেছি। অতীতেও আমরা এই ময়দানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রোগ্রাম করেছি। আমরা আশা করছি, অবশ্যই পুলিশ আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেবে।
নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে জানান, নগরীর লালদিঘী ময়দানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে গত ১৯ আগস্ট সিএমপি কমিশনার বরাবরে আবেদন করা হয়। সিএমপি থেকে এই বিষয়ে কিছু এখনও নগর বিএনপিকে জানানো হয়নি।
এই অবস্থায় সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে নগর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার (২৯ আগস্ট) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি নিয়ে নাসিমন ভবনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ প্রস্তুতি সভা আছে। সেখানে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবু সুফিয়ানকে সহ-সভাপতি ও আবুল হাসেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে বিএনপি।
নতুন কমিটিতে বিপুল সংখ্যক নেতার সমাবেশ ঘটলেও গত এক বছরে এই কমিটি দলীয় কার্যালয়ের বাইরে আসতে পারেনি বলে অভিযোগ বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের।
গত এপ্রিলেও লালদিঘী ময়দানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে সিএমপিতে আবেদন করেছিল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। কিন্তু অনুমতি না পেয়ে দলীয় কার্যালয় নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত সংক্রান্ত মামলার রায়ের দিনও দলীয় কার্যালয়ের বাইরে কোন অবস্থান ছিল না বিএনপির নেতাকর্মীদের। এ নিয়ে নগরীর ভিআইপি ব্যাংকুইট সেন্টারে প্রতিনিধি সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সামনে তৃণমূলের নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নগর বিএনপির নেতারা।
এই অবস্থায় গত ২ জুন সাবেক ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি ও মো.শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া গত ২৮ জুলাই সাবেক ছাত্রদল নেতা এইচ এম রাশেদ খানকে সভাপতি ও নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতে, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে অতীতে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা ছাত্রদলের নেতারা স্থান পেয়েছেন। এই অবস্থায় নগর বিএনপির নেতারা যদি ওয়ার্ড ও থানা পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে পারেন, তাহলে চট্টগ্রামে দল সক্রিয় হবে এবং জোরালোভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপির এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, চট্টগ্রামকে আমরা বিএনপির ঘাঁটি বলি। যদিও আমাদের শত, শত নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় জেলে আছেন, এরপরও বিএনপির লাখো নেতাকর্মী, সমর্থক এখনও আছেন। উপর থেকে নেতারা যদি সবাইকে এক করতে পারেন, তাহলে দল নাসিমন ভবন থেকে বের হয়ে রাজপথে আসতে পারবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠবার্ষিকীটা ভালোভাবে করতে চাই। এ জন্য আমাদের মোটামুটি প্রস্তুতি আছে। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা আসতেও পারেন, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। অনুমতি পাওয়াটা স্বাভাবিক।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ
আরও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির একগুচ্ছ কর্মসূচি
বিএনপি সহিংসতা চালালে জনগণ প্রতিহত করবে: কাদের