Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উচ্ছ্বাসে দুলছিল ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস


৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:৩০

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বয়সটা পুতুল খেলার। অথচ ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসিদের জাগিয়ে রেখে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার জন্য! —এ যে পাবলিক পরীক্ষা! ঘুমে ঢুলে পড়লেও বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া যায়নি। বন্ধুরা জিপিএ-৫ পাবে, সে পাবে না! জিপিএ-৫ না পেলে বাবা কষ্ট পাবে, মা বকবে, বন্ধুরা হাসবে। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কত কষ্ট, কত সাধনা করতে হয়েছে শেষে ক’টা মাস!

সেই কষ্ট আর সাধনার ফল যখন হাতে পৌঁছে তখন কি আর বাঁধ মানে কোমলমতি প্রাণ? তাই তো নোটিশ বোর্ড বা মোবাইল অ্যাপস থেকে পরীক্ষার ফল জানা মাত্রই দুলতে শুরু করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ফুলের বাগান। যে বাগানের ফুলগুলোর নাম— সুরভী আক্তার, ফাইয়াজ তাসনীম রহমান, রাইয়ানা চৌধুরী, সামরিন আহসান, তানহা তাবাস্সুম লামিয়া, তাসনুভা চৌধুরী— ওরা সবাই প্রাইমারি এডুকেশন সার্টিফিকেট (পিইসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্ষুদে শিক্ষার্থী।

 

শনিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল পৌঁছে যায়। দুপুর ১টায় মন্ত্রণালয়ে ব্রিফ করে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হয় পিইসির ফল। দুপুর ২টায় জানানো হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফল। এর আগেই রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাশীরা পৌঁছে যান স্কুল ক্যাম্পাসে।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। দুপুর ১টায় ভিকারুননিসার প্রাইমারি শাখায় নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর কথা ছিল পরীক্ষার ফল। কিন্তু পৌনে ২টাও তা টাঙানো হয়নি। এরইমধ্যে অভিভাবকরা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জেনে নেন সন্তানের পরীক্ষার ফল। প্রায় সবাই ভাল করেছে। কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ ধরা দিয়েছে তাদের ভাগ্যে!

বিজ্ঞাপন

ছোটদের সাফল্য উদ্‌যাপনে প্রস্তুত ছিল স্কুলের ‘বড়’ বোনেরা। গার্সল গাইডস সদস্যরা ড্রাম আর ঢোলে হাত লাগাতেও দুলে ওঠে সুরভী আক্তার, ফাইয়াজ তাসনীম রহমান, রাইয়ানা চৌধুরী, সামরিন আহসান, তাসনুভা চৌধুরী, তানহা তাবাস্সুম লামিয়া নামের ফুলগুলো। আর দূর দাঁড়িয়ে আনন্দ অশ্রুভেজা চোখে দেখতে থাকেন তাদের গর্বিত বাবা-মা।

আনন্দ যেন শেষ হতে চায় না। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আবেগঘন কোলাকুলি, হৈ-হুল্লোড়-উল্লাস, উচ্ছ্বাস-উদ্বেল চার দিকে তৈরি করে অপার্থিব খুশির আবেশ। কারো সাথে কথা বলার সময় নেই আগামী দিনের এইসব ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, আমলা, রাজনীতিক, শিক্ষক, আর্টিস্ট বা সমাজ পরিবর্তনের কারিগরদের!

পিইসি তে জিপিএ-৫ পাওয়া সুরভী আক্তার বাবা নাসির উদ্দীনের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল একটা নিরিবিলি জায়গায়। টানা ১৫ মিনিট নেচে ক্লান্ত সে। একটু জিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। কথা হয় সুরভী আক্তারের সঙ্গে। বড় হয়ে কী হতে চাও? যথারীতি উত্তর— ‘ডাক্তার হব! মানুষের সেবা করব।’

বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় ফাইয়াজ তাসনীম রহমানও। জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে ভীষণ খুশি সে। তাসনীমের মা ফারহানা সুলতানা রহমানও খুব খুশি। তবে জিপিএ-৫ পাওয়াটাকেই একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হিসেবে দেখছেন না তিনি। মেয়েকে চিকিৎসক বানানোও জীবনের একমাত্র ব্রত নয় তার কাছে। বরং সন্তান মানবিক মানুষ হোক— সেটাই তার চাওয়া।

 

সারাবাংলাকে ফারহানা সুলতানা রহমান বলেন, ‘মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে, এতে আমি খুশি। না পেলেও খুব একটা অখুশি হতাম না। কারণ, রেজাল্টের ব্যাপারে ওকে আমরা চাপ সৃ্ষ্টি করি না। পরীক্ষায় ভাল ফল করার চেয়েও বড় বিষয়টি হলো, ও মানুষের মতো মানুষ হোক।’

বিজ্ঞাপন

বন্ধুদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে ক্লান্ত রাইয়ানা চৌধুরী দাঁড়িয়েছিল মা আজহারুন বেগম স্মৃতির হাত ধরে। আর আজহারুন বেগম কথা বলছিলেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে। ক্লাসে সেকেন্ড গার্ল রাইয়ানা চৌধুরী অংকে ১০০ শ’র মধ্যে ১০০ পেয়েছে। মা আজহারুন বেগমের আনন্দটা তাই একটু বেশি। তবে প্রাইমারি লেভেলে এত বড় পাবলিক পরীক্ষার বিপক্ষে এই মা। পরীক্ষায় ভাল ফলের জন্য এইসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার যে চাপ, সেটা অমানবিক বলে মনে করেন তিনি।

সারাবাংলাকে আজহারুন বেগম স্মৃতি বলেন, ‘এত কম বয়সে বাচ্চাদের এ ধরনের পরীক্ষার মুখে ফেলা উচিত নয়। সরকারের উচিত এই পরীক্ষা বাতিল করা। জেএসসি পরীক্ষারও প্রয়োজন নেই। একবারে এসসসি পরীক্ষাই যথেষ্ট।’

তানহা তাবাস্সুম লামিয়া ও তাসনুভা চৌধুরীর বাবা-মাও চান ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ‘বড়’পরীক্ষা বন্ধ হোক। অপ্রয়োজনী পরীক্ষা কোমলমতি শিশুদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’

ছবি তুলেছেন:  হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/এজেড/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর