২ কোটি টাকা আত্মসাৎ, কারাগারে কমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তা
২৯ আগস্ট ২০১৮ ১৯:১৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৩৯ জন গ্রাহকের সোয়া দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় রাষ্ট্রায়াত্ত কমার্স ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
বুধবার (২৯ আগস্ট) চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) ওসমান গণি এই আদেশ দিন।
মামলার আসামি কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার অফিসার (ক্যাশ) মনিরুল ইসলাম বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত আছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এই মামলায় মনিরুল ইসলাম হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন পেয়েছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষে গত সোমবার তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত বুধবার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে বলেন, শুনানিতে আমরা জামিনের জামিনের বিরোধিতা করি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২ কোটি ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৫২৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৩ জুলাই নগরীর কোতোয়ালী থানায় কমার্স ব্যাংকের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুই কর্মকর্তা হলেন, কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার মঈন উদ্দিন আহমেদ (৪১) এবং অফিসার (ক্যাশ) মনিরুল ইসলাম।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফানাফিল্যা দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭৭(এ) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে দুদকের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ১১ জুলাই মঈন উদ্দিন আহমেদ কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় এক্সিকিউটিভ অফিসার বা ওই শাখার দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। মঈন উদ্দিন আহমেদের পাসওয়ার্ডে ওই ব্যাংকের লেনদেন হত। এই সুযোগে দুই কর্মকর্তা এক হিসাবের টাকা আরেক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে ৩৯ জন গ্রাহকের ২ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৫২৩ টাকা সরিয়ে নেন। এ ছাড়া একটি পেমেন্ট অর্ডারের (নম্বর-০১৫৫২৭৪) বিপরীতে আরও পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করে সেটা রেজিস্ট্রারে জমা না দেখিয়ে দুই কর্মকর্তা মিলে আত্মসাৎ করেন।
২০১৪ সালের ১ জুন থেকে ২০১৫ সালের ১ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই দুর্নীতির ঘটনা ঘটে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ কয়েকজন গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে গেলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। তখন গ্রাহকরা ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও দুদক ঘটনা তদন্তে নামে।
এজাহারে উল্লিখিত কমার্স ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঈন উদ্দিন আহমেদ নিজের কম্পিউটার আইডি (০২৩০০২) ব্যবহার করে অননুমোদিতভাবে গ্রাহকের টাকা স্থানান্তর করেন, যার ভাউচারের অথরাইজড স্বাক্ষরের স্থলে মঈন উদ্দিনের স্বাক্ষর আছে। বিধি বর্হিভূত এই অর্থ স্থানান্তর প্রক্রিয়ার জন্য মঈন উদ্দিন আহমেদ এককভাবে দায়ী বলে ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে মনিরুল ইসলামের বিষয়ে বলা হয়েছে-তিনি নগদ টাকা জমা এবং উত্তোলনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি না করে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া নগদ টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হলেও রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি না দিয়ে পে-অর্ডার ইস্যুতে সহায়তা করেন।
দুই কর্মকর্তা ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্নের জন্য দায়ী বলেও ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। এই তদন্তের ভিত্তিতে দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এ ছাড়া ৩৯ গ্রাহকের টাকাও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই