ইভিএম ব্যবহারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের এখতিয়ার ইসির: কাদের
২৯ আগস্ট ২০১৮ ২১:০১
। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে কি হবে না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
‘নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে যে এই মুহূর্তে ইভিএমে ভোট করার মতো বাস্তবতা নেই অথবা তারা করতে চান না বা এই সময়ের মধ্যে ইভিএম মেশিন কেনা এবং এর ব্যবহার— এ বিষয়গুলো যদি যৌক্তিক না হয়, সেটা নির্বাচন কমিশনই ঠিক করবে,’— বলেন কাদের।
বুধবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দাবিটি আওয়ামী লীগের নতুন কোনো দাবি নয়। ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা কিন্তু ইভিএম ব্যবহারের দাবি জানিয়েছিলাম এবং আমরা আমাদের দাবিতে এখনও অটল।
গত তিনটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথা তুলে ধরে বিএনপির উদ্দেশে কাদের আরও বলেন, ইভিএমে এত অবিশ্বাস কেন? একটায় জিতলেন সিলেট। সেখানেও তো ইভিএমে জেতা দিয়েই শুরু।
ইভিএম আজকে বিশ্ব স্বীকৃত একটা আধুনিক ভোটিং সিস্টেম দাবি করে তিনি আরও বলেন, ভারতে অনেকগুলো নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে হয়েছে এবং উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও এই পদ্ধতি চালু আছে। আপনারা কেনো বিরোধিতা করেন? স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি চান ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি কোথায়?
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাকে স্বাগত জানান কাদের।
আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তফ্রন্টের জাতীয় ঐক্যের শোডাউন বিষয়টি ভালো দাবি করে কাদের বলেন, ‘নির্বাচন এলে অনেক ধরনের পোলারাইজেশন হয়, সমীকরণ হয়! ফ্রন্ট হবে, অ্যালায়েন্স হবে; এটা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। এখন গণফোরামের সঙ্গে যদি যুক্তফ্রন্টের মিলন হয়, এই সুখের মিলন নির্বাচন পর্যন্ত স্থায়ী হোক। এর জন্য আমাদের শুভকামনা রয়েছে। তবে শোডাউন বলতে যা বুঝায়, সেখানে যদি ২০১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের গন্ধ পাওয়া যায়, আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে কিন্তু জনগণ প্রতিরোধ করবে।’
আন্দোলন যদি রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক আন্দোলন হয় তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। আর সহিংসতার সমুচিত জবাব জনগণই দেবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই জবাব দেওয়া হবে বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এসব শোডাউনের আওয়াজ অতীতে অনেক শুনেছি। বাংলাদেশের জনগণের মুড এখন সবাই জানে, জনগণ এখন ইলেকশনমুখী। এখন কেউ আন্দোলন আর খাবে না, সাড়া পাবেন না। ৯ বছরে ৯ মিনিটেও পারেননি, এখন তিন মাসে আন্দোলন করবেন— এটা জনগণ বিশ্বাস করে না। নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আছে শিডিউল ঘোষণার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নির্বাচন হবে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো, সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশে একটি ‘ক্রেডিবল, ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ জানান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
‘নির্বাচনে আসা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। না আসাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার কীভাবে তাদের নির্বাচনে আনবে? এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হয়?’— বলেন সরকারের সেতুমন্ত্রী।
আদালতের রায়ে কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নেই। দণ্ড দিয়েছে আদালত, মুক্তিও দেবে আদালত। আমাদের কিছু করার নেই।
কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনে দুই মহানগরকে আলিটিমেটাম
রাজধানীর দুই মহানগর কমিটিকে ঘিরে আসা বিভিন্ন অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখনও কেন সিটির বিভিন্ন শাখা কমিটি করার ব্যাপারে অভিযোগ আসে? তাহলে নির্বাচন করব কখন? কেন্দ্র কমিটি হবে কখন? আমি বেশি কথা বলতে চাই না, দুই সিটিকে বলছি— কমিটিতে তো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে গেছে। নিচের দিকে অ্যাডজাস্টমেন্ট আছে, সেই সমস্যাটা একটু ত্যাগ স্বীকার করলে করা যায় না?
কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা আছে স্বীকার করে কাদের আরও বলেন, ছোটখাট বিভেদগুলো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আপনারা এটার সমাধান করতে পারেন না? এই নিয়ে আর কত অভিযোগ শুনতে হবে? আমি আবারও ১০ দিন সময় দিচ্ছি। এটা লাস্ট। আর কোনো সময় দেবো না। আমাদের নেত্রী পরিষ্কারভাবে আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি সেটাই জানিয়ে দিচ্ছি। ১০ দিনের মধ্যে অন্তর্কলহ হতে পারে— এমন বিষয়গুলো সমাধান করুন। যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে গেছেন, তাদের তো হারাবার কিছু নেই। নির্বাচন সামনে, ঐক্যের স্বার্থে একোমোডেট করলে অসুবিধা কোথায়?
নেত্রীর নির্দেশ, আগামী সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখের মধ্যে মহানগরের সব কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করতে হবে বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল হক, উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এবং সাদেক খানসহ অনেক।
আরও পড়ুন-
‘ইভিএম নিয়ে তোড়জোড় দূরভিসন্ধিমূলক’
‘অ্যাকসেপ্টেবল নির্বাচন হবে, আন্দোলনের প্রয়োজন নেই’
সারাবাংলা/এনআর/এমআই