Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বদলে গেছে ডেঙ্গুর ধরন, বেড়েছে প্রকোপ ও মৃত্যু


৩০ আগস্ট ২০১৮ ১১:৩৯

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা:  এ সপ্তাহেই পান্থপথের একটি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হন নুজহাত সুলতানা। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বরের মাত্রা  ১০৩ ডিগ্রি। হাসপাতাল ভর্তির পর জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। অথচ তার শরীরে কোনও র‌্যাশ নেই। এমনকি ব্যথাও এতোটা বেশি যা সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে হওয়ার কথা নয়।

নুজহাতের মতই গত ১৯ আগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছে ১০ বছরের তাসফীন তাহজিব হাসান। তাসফীনের জ্বর ছিল ১০৫ ডিগ্রি। শরীরে কোনও র‌্যাশ ছিল না, কিন্তু প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখা গেল তাসফীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি বদলে গিয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের ধরন।’ এতে করে অনেকটাই শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ,এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়ার সংখ্যা মোট ৯ জন।

গত ১৫ জুলাই ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ৯ বছরের তাহমিদ ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় । একদিন পরই মৃত্যু হয় তার। অন্যদিকে, হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত ২৬ বছরের সেজুঁতি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ১২ জুলাই, এর তিন দিন পর ১৫ জুলাই মারা যান তিনি। আবার ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ১ বছর সাত মাস বয়সী আরিয়ান সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১২ জুলাই ভর্তি হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় ১৫ জুলাই। এর আগে ৪ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি আট বছরের হিমু। মারা যায় চার দিন পর, ৮ জুলাই।

এরও আগে, গত ২১ জুন হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে ৩১ বছরের রোজলিন বৈদ্য ভর্তি হয়েছিলেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর মারা যান তিনি। একই হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে ৭ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই দিন পর মারা যান ৩৪ বছরের ফারজানা আক্তার। আর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত নার্গিস বেগম গত ২৫ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরদিনই মারা যান।

বিজ্ঞাপন

গত ২৫ জুলাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান চিকিৎসক ফয়সাল বিল্লাহ। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডা. ফয়সাল বিল্লাহ ছিলেন কলেজের ৪১তম ব্যাচের চিকিৎসক। গত ৮ আগস্ট বেসরকারি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরেক ডেঙ্গু রোগী।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম লক্ষণ ছিল শরীরে র‌্যাশ থাকা, কিন্তু চলতি বছরের ডেঙ্গু রোগীদের শরীরে র‌্যাশ কম দেখা যাচ্ছে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু এবার অনেক বেশি। রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি থাকছে এবারে ডেঙ্গুতে। এবার ডেঙ্গুতে মানুষ মারাও যাচ্ছে।’

‘মশা নিধন না করলে বা মশা নির্মূলের চেষ্টা যদি না করা হয় তাহলে ডেঙ্গু ঠেকানো যাবে না। নিজের বাড়ি-ঘরের পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। ঘরের ভেতরে পরিষ্কার পানি জমিয়ে রাখা যাবে না, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তার ধারের ড্রেনগুলোতে পানি জমে যাচ্ছে, পরিষ্কার পানি পেয়ে সেখানে মশা ডিম পারার সুযোগ পাচ্ছে বেশি। ড্রেনেজ সিস্টেমগুলো সিটি করপোরেশনকে ঠিক করতে হবে, কোথাও যেন পানি জমে থাকার সুযোগ না পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে তাদের। নয়তো এবারে ডেঙ্গু ভোগাবে’, বলেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।

আবার ডেঙ্গুর ধরনটাই এমন যে কোন বছর কম হলে তার পরের বছর বেশি হয়, বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার। সে হিসেবে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বেশি এবং ডেঙ্গুর প্রকোপও অনেক বেশি।

বিজ্ঞাপন

আয়েশা আক্তার সারবাংলা’কে বলেন, ‘সাধারণত জুলাই-আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর এ তিন মাস-ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকি আমরা। গত বছরে চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব বেশি ছিল কিন্তু চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব খুব বেশি।’

‘ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে আমরা চলতি বছরের শুরু থেকে কয়েকদফা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে মিটিং করেছি, তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বাড়ি ঘর পরিষ্কার রাখার জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে পত্রিকা, টেলিভিশনগুলোতে। কিন্তু তাতেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না’, যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার থেকে জানা যায়, গত জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৬ জন, জুলাই মাসে ৮৬৪ জন এবং আগস্ট মাসে এক হাজার ৫৪ জন।

গত  ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বর, ডেঙ্গু হেমরজিক এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা মোট ২ হাজার ২৭১ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩২ জন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন ২ হাজার ২৪২জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ১২০ জন।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তক্ষরণ (যেমন, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হওয়া, ত্বকের নিচে ফুঁসকুড়ির মতো দেখা দেওয়া, বমির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া) হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদেরও রোগীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে জানান তিনি।

একইসঙ্গে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা বলেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমও/জেডএফ

ডেঙ্গু ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে প্রকোপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর