বিমসটেক দেশগুলোতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৩০ আগস্ট ২০১৮ ১৭:২৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে এই জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মুক্তবাণিজ্য এলাকা তৈরি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি সহযোগিতা, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানো এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়ার উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেলে নেপালের কাঠমান্ডুতে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতায় বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) জোট গড়ে তুলেছে। ১৯৯৭ সালে ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড এই জোট গড়ে তোলে। পরে এতে যুক্ত হয় মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান।
এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির টেকসই বে অব বেঙ্গলের লক্ষ্যে’ (Towards a Peaceful, Prosperous and Sustainable Bay of Bengal Region)।
সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন গতিশীলতার ফলে বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ দেশগুলোকে নতুন গতিশীলতার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে এবং বর্তমান বাস্তবতা হলো— দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে এটা করতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় আঞ্চলিক ফোরামের প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। বিমসটেককে বিশ্বের প্রগতিশীল অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে এবং দেশগুলোর উচিত এই সম্ভবনাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা।
শেখ হাসিনা বলেন, নেতাদের খুব উৎসাহ ও সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি থাকলেও প্রতিষ্ঠার ২১ বছরে বিমসটেক খুব বেশি সফল হতে পারেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিমসটেকের সুযোগ ও কাঠামো পুনঃপর্যালোচনা করতে উপস্থিত নেতাদের আহ্বান জানান তিনি। এর জন্য দৃশ্যমান ফলাফল পেতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাস্তব উদ্যোগের জন্য মৌলিক আইনি কাঠামো মজবুত করার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
২০১৬ সালে ভারতের গোয়ায় বিশেষ বিমসটেক রিট্রিটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে নেওয়া ১৬টি এজেন্ডার মধ্যে কয়েকটি বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেকগুলো এখনও বাকি।
বিমসটেক ফোরামকে সুসংহত, কার্যকর ও মনোযোগের কেন্দ্রে এনে এটি থেকে ভালো কিছু পেতে তিনটি প্রধান বিভাগ ধরে ১৪টি সুনির্দিষ্ট খাতের দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিন বিভাগের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন’ বিভাগে রয়েছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কৃষি বিষয়ক সহযোগিতা; ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ বিভাগে রয়েছে নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ‘জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ’ বিভাগে প্রধানমন্ত্রী সংস্কৃতি বিনিময় ও জনস্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমসটেকভুক্ত কয়েকটি দেশ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় সন্তোষ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অন্য সবার অংশগ্রহণে এটি বিমসটেক ইলেকট্রিক গ্রিডে পরিণত হতে পারে।
সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস এই অঞ্চলের দেশগুলোর সবারই শত্রু।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা এবং অভিযোজনে উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিজস্ব অর্থায়নে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
সন্ত্রাস বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শূণ্য সহিষ্ণুতা’ নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সফলভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর উন্নয়ন নির্ভর করে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা দূরীকরণসহ বৈষম্যহীন সুষম উন্নয়ন নীতি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ।
‘একটি বাড়ি, একটি খামার’, ‘আশ্রায়ন প্রকল্প’, ‘সবার জন্য শিক্ষা’, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, সবার জন্য বিদ্যুৎ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারী ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় উদ্যোগসহ তার সরকারের সময়ে বাংলাদেশে নেওয়া কিছু অন্যন্য পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জনপ্রিয় ও সরকারের বিভিন্ন জনবান্ধব পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ভুটানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ও-চার, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বিমসটেক দেশগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এইচএ/টিআর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেখ হাসিনা