চীন, পোল্যান্ড থেকে আসছে ইভিএম যন্ত্রপাতি
৩০ আগস্ট ২০১৮ ২৩:১৭
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য প্যোল্যান্ড, চীন ও হংকং থেকে ইভিএম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। এইসব যন্ত্রপাতি সংযোজন করে ইভিএম তৈরির পর তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।
ইভিএম ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ইসির কমিশন সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে আরপিও সংশোধনের আগে অর্থাৎ গত জুলাই থেকে ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য দেড় লাখ ইভিএম কিনতে তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। পরে গত জুলাইর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইভিএম কেনার জন্য আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ইভিএম এর যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ অনুমোদন নিয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। এরইমধ্যে ৭৯৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আর যন্ত্রপাতি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অনেক কিছুই অনুমোদন দিতে হয়। তবে ট্রাস্ট ব্যাংকের ঋণপত্র অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে বলতে হলে আমাকে কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে। এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারছি না।’
অন্যদিকে ইভিএম কেনার প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সারাবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বর্তমান আইনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যায়, আরপিও সংশোধন হওয়ার ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। তবে আগামী নির্বাচনেই যে তা ব্যবহার করা হবে তা নয়, ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনা করে সবকিছু করা হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
‘তড়িঘড়ি করে ইভিএম কেনা হচ্ছে, এর মাধ্যমে কোন অনিয়ম হবে কি না’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টাকা তো সরকারের হাতে। আমাদের হাতে না। ইভিএম তারাই কিনবে। এখানে আমাদের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।’
এটিএম শামসুল হুদা প্রথম ইভিএম প্রকল্প গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় ২০১০ সালে প্রথমে ৫৩০টি ইভিএম মেশিন কেনা হয়। পরে এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে নানা যান্ত্রিক ক্রটি ধরা পড়ে।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) ৭০০ ইভিএম প্রস্তুত করে ইসিকে সরবরাহ করা হয়। সেগুলোও ক্রটিমুক্ত ছিল না। যার ফলে ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে পিটিআই কেন্দ্রে ইভিএমে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ভোট নিতে না পারায় সেখানে রণক্ষেত্র তৈরি হয়। এ সব কারণে রকিব উদ্দিন কমিশন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসেন। একইসঙ্গে তার কমিশন বেশকিছু ইভিএম ধ্বংস করে দেয়।
সারাবাংলা/জিএস/একে